Created by Admin Blog 2020-05-09
দিন লিপিইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সংস্কৃতি হলো ইসলামী সংস্কৃতি । ইসলামের মূলনীতির উপর ভিত্তি করে মানুষ তার আচার-ব্যবহার, দেহ, মন ও আত্মাকে যেভাবে সংস্কার ও সংশোধন করে, তাই ইসলামী সংস্কৃতি। ইসলামী সংস্কৃতি তার আপন বৈশিষ্ট্য ও আপন গুণে গুনান্নিত। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন, তাই মানব জীবনের কল্যাণকর সকল কর্মকান্ডই এ সংস্কৃতির আওতাভুক্ত। এই সংস্কৃতির বিস্তারিত রূপ উদ্ভাসিত হয়েছে পবিত্র কুরআনে এবং রাসূলুল্লাহ সা. এর জীবনাচরণের মাধ্যমে তা পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়েছে। এই সম্পর্কিত কিছু জনপ্রিয় এবং অধিক বিক্রিত বই আপনার সংগ্রহে রাখতে পারেন। যেমনঃ
২. জেরুসালেম
৩. ইস্তাম্বুল: একটি শহরের স্মৃতিচারণ
পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহই হলো এর মূল ভিত্তি। কুরআন-সুন্নাহ বহির্ভূত কোন সংস্কৃতিকে ইসলামী সংস্কৃতি বলা যাবে না। ইসলামী সংস্কৃতির ভিত্তি হলো কুরআন ও সুন্নাহ। সুতরাং কুরআন-সুন্নাহর ভাবধারার সাথে সাংঘর্ষিক কোন সংস্কৃতিই ইসলামী সংস্কৃতি হতে পারেনা। কুরআন-সুন্নাহ বহির্ভূত সংস্কৃতি ইসলামী সংস্কৃতি কোন ভাবেই গ্রহণ করেনা।ইসলামী সংস্কৃতি কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী এক থাকে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন হয়না। ইসলামী সংস্কৃতি কুরআন-সুন্নাহ বর্ণিত উৎসব ব্যতিত অন্য কোন উৎসব গ্রহণ করেনা। যেমন মুসলমানদের উৎসব মাত্র দু’টি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।
জীবন চর্চাই সংস্কৃতি। জীবন যেহেতু গতিশীল তাই সংস্কৃতিও সবসময় গতিশীল। জীবনের শুরু যেখান থেকে সংস্কৃতির সূচনা বিন্দুও সেখানেই। পৃথিবীতে মানুষের প্রথম জীবন চর্চা যেহেতু মহান আল্লাহর হিদায়াত ও আনুগত্য দিয়েই শুরু। তাই এ প্রথম জীবন চর্চাই ছিল ইসলামী সংস্কৃতির সূতিকাগার। সুতরাং নিশ্চিতভাবেই এ কথা বলা যায় যে, আদম আ. এর দ্বারাই ইসলামী সংস্কৃতির গোড়াপত্তন হয়। এবং যুগে যুগে নবী রাসূলগণের মাধ্যমে তা বিকশিত হয়ে শেষ নবী মুহাম্মদ স. এর যুগে এসে পূর্ণতায় পৌঁছায়। নবী করীম স. বলেছেন : উন্নত সংস্কৃতি জীবনধারাকে পূর্ণতাদান করার জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি। (ইবন মাজাহ)
কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে: আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম। এবং আমি ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম।
মহান আল্লাহর বাণী “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ, যে তোমাদের মধ্যে খোদাভীরু” (সূরা হুজরাত : ১৩)
মানবতাবাদী সংস্কৃতি হচ্ছে ইসলামী সংস্কৃতি, এতে রয়েছে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা।
রাসূল (সা.) বলেন, মানব চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের জন্যই আমি প্রেরিত হয়েছি ।ইসলামী সংস্কৃতি একজন মুসলমানকে আনুগত্যশীল করে তোলে। সে আরো বেশি রাসূল (সা.) এর সহীহ সুন্নাহ অনুযায়ী তার জীবন পরিচালনা করতে তৎপর হয়।
যে সংস্কৃতিতে শিরকের কোন ছোঁয়া নেই অর্থাৎ ইসলামী সংস্কৃতি হচ্ছে মহান আল্লাহর তাওহীদ ভিত্তিক সংস্কৃতি।
ইসলামী সংস্কৃতির মূলনীতি ও মূল্যবোধ বিশুদ্ধ, যথার্থ, মহান ও সার্বজনীন। এ সংস্কৃতির মূলনীতি এতই বিশুদ্ধ যাতে সন্দেহ সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। আর এটি এমন একটি সার্বজনীন সংস্কৃতি যা কোন দেশ, জাতি, ভাষা, বর্ণে সীমাবদ্ধ নয়। মানুষকে চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ইসলামী সংস্কৃতির মূল লক্ষ্য। মানবাত্মার সার্বিক উৎকর্ষ ও উন্নতি সাধন করে পরকালের মুক্তি অর্জন করবে। একে কুরআনের ভাষায়, ‘তাযকিয়া’ বলা হয়েছে।
ইসলামী সংস্কৃতিতে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ব, স্রষ্টার একত্ব ও মিল্লাতের অভিন্নতার ভিত্তিতে এক ব্যাপকতর ঐক্য ও সম্মিলিত ভাবধারা গড়ে ওঠে। এর ফলে মানব সমাজ থেকে সবরকমের জোর-জবরদস্তি, স্বেচ্ছাচারিতা, যুলুম-শোষণ ও হিংসা-বিদ্বেষ দূরীভুত হয়ে যায় এবং পরস্পরের আন্তরিক ও নি:স্বার্থ ভ্রাতৃত্ব গড়ে ওঠে।
ইসলামী সংস্কৃতি তার আপন মহিমায় মহিমান্বিত। এ সংস্কৃতির অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোই তাকে এ স্বাতন্ত্র্য মর্যাদা দান করেছে। লজ্জা-শরমকে ঈমানের অঙ্গ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। ইসলামী সংস্কৃতিতে বেহায়পনা ও নিলর্জ্জতার কোন স্থান নেই। আল্লাহ ভীতিকে সম্মানের মানদন্ড নিরুপণ করা হয়েছে। এ সংস্কৃতির লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে পরিচ্ছন্ন, সুস্থ, মার্জিত, ভদ্র এবং আদর্শবান ও সুরুচিসম্পন্ন চরিত্রবান রূপে গড়ে তোলা।শুধু চিত্ত বিনোদনই ইসলামী সাংস্কৃতির লক্ষ্য নয়। আবার একে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষাও করা হয়নি, বরং যে সব চিত্ত বিনোদনে শরীআতের সীমা লংঘিত হয় এবং যা মহান আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হয়, তাই ইসলামে নিষিদ্ধ।
একটি প্রবাহমান নদীর ন্যায় সংস্কৃতি । সংস্কৃতি-অপসংস্কৃতি মিলেমিশে একাকার হয়ে আজ নদীর স্রোতে প্রবাহিত হয়ে দূষণ ছড়াচ্ছে। বর্তমান মুসলিম সমাজেও পাশ্চাত্য তথা পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র ও পৌত্তলিকতার ভাবধারায় গড়া সংস্কৃতি বিরাজমান। আজ আমাদের সংস্কৃতিকে বিদেশী ও বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রভাব থেকে মুক্ত করে ইসলামী আদর্শের মানে উত্তীর্ন এক নতুন সংস্কৃতি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ইসলামী আদর্শবাদীদের সংগ্রাম চালাতে হবে। এ সংগ্রাম কঠিন ও দু:সাধ্য। এ পথে পদে পদে নানাবিধ বাধা বিপত্তি, প্রতিবন্ধক ও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু পরিপূর্ণ নিষ্ঠা ও সাহসিকতার সাথে এ সংগ্রাম চালাতে পারলে এর জয় হবেই ইনশাআল্লাহ।।
© 2019 BoiBazar.com All Rights Reserved | Design by BoiBazar.com