Created by Admin Blog 2020-04-30
দিন লিপিইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, যাতে আছে জীবন ধারনের সকল নির্দেশনা। ইসলামে যাবতীয় ক্ষতিকর বা অকল্যাণকর বস্তু ও বিষয়কে হারাম করা হয়েছে এবং যাবতীয় কল্যাণকর বিষয় বা বস্তুকে করা হয়েছে হালাল। একজন প্রকৃত মুসলিম হিসেবে ইসলামের এই বিধানগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এর মাঝে পর্দার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পর্দা সম্পর্কে বিভিন্ন মানসম্পন্ন বই লেখা হয়েছে। তার মাঝে কিছু বই হলোঃ
১. কুরআন-সুন্নাহর আলোকে পোশাক, পর্দা ও দেহ-সজ্জা
২. কোরআন ও বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে পর্দা
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে সমগ্র মাখলুকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা নারী ও পুরুষ হিসেবে মানবজাতির শ্রেণী বিন্যাস করেছেন। মানুষকে একই আত্মা থেকে সৃষ্টি করলেও তিনি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক“
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব সৃষ্টি করার পর নারী ও পুরুষ উভয়কে কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। নারী যেমন কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী অনুরূপভাবে পুরুষেরও রয়েছে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। নারী ও পুরুষের বৈশিষ্টগত পার্থক্যটা অনেকটাই সৃষ্টিগত; যা আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না। আর কিছু পার্থক্য আছে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। নারীদের দায়িত্ব ও পুরুষের দায়িত্ব কখনো এক নয়। একজন পুরুষ যে দায়িত্ব পালন করতে পারে নারীরা তা পারে না। আবার একজন নারী যে কাজ করতে পারে একজন পরুষ তা করতে পারে না। নারীর জন্য সন্তান লালন-পালন, স্বামীর খেদমত, বাড়ীর ঘরের রান্না-বান্না ইত্যাদি কর্মই হল শোভনীয়। আর পুরুষের জন্য খেত-খামার, চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি শোভনীয়।
রাসূল সা: তার স্ত্রী হজরত উম্মে সালমা ও মায়মুনা রা:কে অন্ধ সাহাবা হজরত ইম্মে মাকতুম রা:-এর সাথে পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন’ (বুখারি ও তিরমিজি)।
ইসলামে নারী – পুরুষ উভয়ের জন্যই পর্দা করা ফরজ। আমাদের সমাজে একটি ধারনা মাঝে মাঝে দেখা যায় তা হলো পুরুষের পর্দার ব্যাপারটি হালকা ভাবে দেখা। ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এখানে জীবন ধারনের সকল কিছুই দেওয়া আছে। পুরুষের পর্দার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলোঃ
ইসলামে পুরুষের পর্দা পালন করার নিয়ম-কানুন পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীস সমূহে উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে নিয়ম গুলো আলোচনা করা হলো-
(১) পুরুষের নাভীর ওপর থেকে হাঁটুর নিচে এবং টাকনুর ওপর পর্যন্ত ঢাকতে হবে। পুরুষের হাটুর ওপরে এবং টাকনুর নিচে কাপড় পরা কবিরা গুনাহ ।
(২) পোশাকটি যেন বিপরীত লিঙ্গের পোশাকের অনুরূপ না হয়। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন-সেই সমস্ত নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন, যারা পুরুষদের বেশ ধারণ করে এবং সেই সমস্ত পুরুষদেরকেও অভিশাপ দিয়েছেন, যারা নারীদের বেশ ধারণ করে। (আবূ দাউদ: ৪০৯৭, ইবনে মাজাহ: ১৯০৪)
(৩) পোশাক এমন পাতলা হওয়া যাবেনা যাতে কাপড় পরা সত্বেও ওপর দিয়ে ভেতরের চামড়া নজরে আসে। কারণ এমন কাপড় পরা না পরা একই কথা।
(৪) পোশাক হতে হবে ঢিলেঢালা এবং মার্জিত। এমন আঁট-সাঁট (টাইটফিট) হওয়া যাবেনা যাতে দেহের উঁচু-নিচু গঠন বোঝা যায় ।
(৫) পোশাকটি যেন কোনো অবিশ্বাসী/কাফেরদের অনুকৃত না হয়। প্রিয় নবীজী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন (পোশাকে, চাল-চলনে অনুকরণ) করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত।’ (আবূ দাউদ, মিশকাত: ৪৩৪৭)
(৬) এমন পোশাক পরিধান করবে, যা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যৌন আবেদনময় হবে না এবং বিকৃত চিন্তার জন্ম দিবেনা।
(৭) পোশাক যেন জাঁকজমকপূর্ণ প্রসিদ্ধিজনক না হয়। কারণ, এমন ধরনের পোশাক পরলে সাধারণত পরিধানকারীর মনে অহংকারের সৃষ্টি হয়। তাই মহানবী (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধিজনক পোশাক পরবে, আল্লাহ্ তাকে কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। (আহমাদ, আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত: ৪৩৪৬)
মাহরিম সম্পর্কে নির্দেশ : ‘নারীদের মধ্য থেকে যাদের তোমাদের পিতা, পিতামহ বিয়ে করেছে (সৎ মা ও দাদী), তোমরা কখনো তাদের বিয়ে করো না, হ্যাঁ এ নির্দেশ আসার আগে যা হয়ে গেছে তা তো হয়েই গেছে, এটি আসলেই ছিল একটি অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ এবং খুবই ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট আচরণ’। ‘বিয়ের ব্যাপারে তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে তোমাদের মা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, আরো হারাম করা হয়েছে সেসব মা যারা তোমাদেরকে বুকের দুধ খাইয়েছে, তোমাদের দুধ বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মা, তোমাদের স্ত্রীদের মাঝে যাদের সাথে তোমরা সহবাস করেছ তাদের আগের স্বামীর ঔরসজাত মেয়েদেরকেও হারাম করা হয়েছে, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে রয়েছে, অবশ্য যেসব স্ত্রীর সাথে বিয়ের পর তোমরা সহবাস করোনি, তাহলে তাদের আগের স্বামীর ঔরসজাত মেয়েদের বিয়ে করতে দোষের কিছু নেই, তোমাদের নিজেদের ঔরসজাত ছেলেদের স্ত্রীদেরও আর এক সাথে দুই বোনকে হারাম করা হয়েছে’ (সূরা আন নিসা : ২২-২৩)।
নারী ও পুরুষের কর্ম ক্ষেত্র ও দায়িত্ব ভিন্ন হলেও আল্লাহ তা‘আলার নিকট মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের বিবেচনা হলো তাকওয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহকে যত বেশি ভয় করবে, চাই সে নারী হোক বা পুরুষ হোক আল্লাহর নিকট তার মূল্যায়নটা তত বেশি হবে। আল্লাহ তা‘আলা কোনো নারী বা পুরুষকে তার নেক আমলের প্রতিদান দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য প্রদর্শন করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত”।
যদি কোনো নারী বা পুরুষ মুমিন থাকা অবস্থায় নেক আমল করে আল্লাহ তা‘আলা তাদের উভয়কে জান্নাত দান করবেন তাদের প্রতি কোনো প্রকার জুলুম করা হবে না এবং বৈষম্য করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে নেক কাজ করবে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুর-বীচির আবরণ পরিমাণ জুলুমও করা হবে না”।
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
“যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী হোক, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।“
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
“কেউ পাপ কাজ করলে তাকে শুধু পাপের সমান প্রতিদান দেওয়া হবে, আর যে পুরুষ অথবা নারী মুমিন হয়ে সৎকাজ করবে, তবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে তাদেরকে অগণিত রিজিক দেওয়া হবে।“
মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে পরিপূর্ণ পর্দা করে জীবন যাপন করার তৌফিক দিন। আমীন।
© 2019 BoiBazar.com All Rights Reserved | Design by BoiBazar.com