Created by Admin Blog 2020-05-17
দিন লিপিকিয়ামত ও পরকালে বিশ্বাস ঈমানের অংশ। কিয়ামত আরবি শব্দ, এর অর্থ মহাপ্রলয়, পুনরুত্থান। ইয়াওমুল কিয়ামা হলো মহাপ্রলয়ের দিন।কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বিশ্বজগৎ ধ্বংস করবেন, মানব ও জ্বিন দেহের পুনুরুত্থান ঘটাবেন, তাদের বিচার করবেন এবং চিরস্থায়ীভাবে কর্মফল প্রদান করবেন।
কোরআন মাজিদে আল্লাহ বলেন-কিয়ামত অবশ্যই আসবে, এতে সন্দেহ নেই; কিন্ত অধিকাংশ লোক বিশ্বাস স্থাপন করে না।
(সূরা আল-মু’মিন আয়াত৫৯)
গবেষক আলেমরা মৃত্যু-পরবর্তী সময় থেকেই পরকালের সূচনা বলে মত দিয়েছেন, কারণ পরকাল বলতে বিচার দিবস ও তার পরবর্তী সময়কে বোঝানো হয়। তবে মৃত্যুর পর থেকেই যেহেতু পরকালীন সুখ ও শাস্তি, জান্নাত ও জাহান্নামের ছোঁয়া মানুষ পেতে শুরু করে। মৃত্যুর পর থেকেই ফেরেশতাদের আদর-সমাদার, কবরের প্রশ্ন-উত্তর, পুনরুত্থান, হিসাব, মিজান, পুলসিরাত, জান্নাত ও জাহান্নাম সব কিছু পরকালের অন্তর্ভুক্ত। কিয়ামত সম্পর্কে কিছু জনপ্রিয় বই যেইগুলো আপনার মাঝে বিচার দিনের ভয় এবং বিশ্বাস দৃঢ় করবে।
১. মহাপ্রলয়
২. মৃত্যু থেকে কিয়ামাত (ইসবাতু আযাবিল কবর)
৩. ওপারে
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আল্লাহ ওহি নাজিল করেন- ‘কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে।’ (সুরা কামার, আয়াত : ১)
আল্লাহ আরো বলেন, ‘তারা আপনার কাছে কিয়ামত কখন হবে জিজ্ঞাসা করছে? তার আলোচনার সঙ্গে তোমার কি সম্পর্ক! তার পরম জ্ঞান আছে তোমার প্রতিপালকের কাছে।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত : ৪২-৪৪)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘আপনার কাছে তার কোনো জ্ঞান নেই এবং নেই কোনো সৃষ্টির কাছেও। বরং এর উদ্দেশ্য ও প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকে। তিনিই তা সংঘটিত হওয়ার নির্ধারিত সময় জানেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৮/৩১৮)
কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘তারা কি শুধু এই অপেক্ষায় রয়েছে যে কিয়ামত তাদের কাছে এসে পড়ুক। বস্তুত কিয়ামতের লক্ষণগুলো তো এসেই পড়েছে। সুতরাং এসে পড়লে তারা কীভাবে উপদেশ গ্রহণ করবে? (সূরা : মুহাম্মাদ, আয়াত : ১৮)।
কিয়ামতের আলামত কখন বা কোন সময়ে ঘটবে, সে বিষয়ের জ্ঞান একমাত্র মহান আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আর তাই তিনি (আল্লাহ্) পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ "তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে?
আপনি বলে দিন এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তিনিই তো অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে।" (সূরা আরাফঃ ১৮৭)
কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে এ বিশ্বাস প্রত্যেক মুসলিমেকেই রাখতে হবে। যদিও মহান আল্লাহ্ কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় মানুষকে বলে দেননি, কিন্তু পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এর বিভিন্ন নিদর্শন বা চিহ্ন বলে দেয়া হয়েছে এই নিদর্শনগুলো ।
কিয়ামত কখন বা কোন সময়ে ঘটবে, সে বিষয়ের জ্ঞান একমাত্র
মহান আল্লাহর কাছেই
রয়েছে। আর তাই তিনি (আল্লাহ্) পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ
"তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে?
আপনি বলে দিন এর খবর তো আমার পালনকর্তার কাছেই
রয়েছে। তিনিই তো অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে।"
(সূরা আরাফঃ ১৮৭)
কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে এ বিশ্বাস প্রত্যেক মুসলিমেকেই
রাখতে হবে। যদিও মহান আল্লাহ্ কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময়
মানুষকে বলে দেননি, কিন্তু পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এর
বিভিন্ন নিদর্শন বা চিহ্ন বলে দেয়া হয়েছে। এই নিদর্শনগুলো
দুই ভাগে বিভক্ত।
১। ছোট আলামত।
২। ও বড় আলামত।
বিভিন্ন হাদিস ও কিতাব থেকে কিয়ামতের ছোট ও বড় আলামত
নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।
কেয়ামতের ছোট ছোট আলামতগুলোর অন্যতম হলো-
১। এমন কিছু ঘটনা ঘটবে যা পূর্বে কখনো ঘটেনি এবং ঘটার কোন
ধারণাই ছিল না।
২। অমুসলিমদের হাতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ আহরিত হবে।
৩। মানুষ তার বাসস্থানকে শিল্প কারুকার্জ দিয়ে সুশোভিত
করাকে গুরুত্ব দিবে।
৪। জমিনের অংশসমূহ নিকটবর্তী হয়ে যাবে।
৫। শিক্ষায় বিপ্লব ঘটে যাবে কিন্তু দ্বীনি শিক্ষা সম্পর্কে
অজ্ঞ থেকে যাবে।
৬। মহিলারা অশ্লীলতায় ডুবে যাবে। মহিলাদের সৌন্দর্য চর্চা
কেন্দ্রের ব্যাপক বিস্তার ঘটবে।
৭। মহিলারা পুরুষের আকৃতি ধারণ করবে আর পুরুষ মহিলার আকৃতি
ধারণ করবে।
৮। কিছু মুসলমান মদ পান করবে অন্য নামে।
৯। মানুষের মধ্যে সুদের ব্যাপক বিস্তার হয়ে যাবে।
১০। অভিনন্দন ও অভিবাদন মানুষের কাছে অভিশাপ হয়ে যাবে।
১১। জমিনের বিভিন্ন অংশে ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাবে।
১২। হঠাৎ মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাবে আর হত্যার মতো অপরাধ
বৃদ্ধি পাবে।
১৩। মানুষ কথায় সুন্দর হবে, আর কাজে অসুন্দর হবে।
১৪। কন্যা সন্তানরা তার মাকে শাসন করবে এবং মায়ের
অনুকরণীয় হবে।
১৫। বেপর্দা ব্যক্তিরাই সমাজের নেতৃত্ব দিবে।
১৬। সমাজের নিকৃষ্ট এবং রাখাল শ্রেণীর লোকেরা সুউচ্চ
প্রাসাদ নির্মাণ করবে।
১৭। জগতের লোকেরা সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণে একে অপরে
প্রতিযোগিতা করবে।
১৮। মানুষ তার সন্তানের চাইতে কুকুর লালন পালনকে বেশি
প্রাধান্য দিবে।
১৯। নারীরা চুলের খোপা মাথার ওপরে এমনভাবে বাঁধবে যেন
উটের পিঠের উঁচু জায়গার মতো দেখাবে।
২০। দুনিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা অতিদ্রুত ও সহজ হয়ে যাবে।
২১। সময় তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাবে।
২২। দাসী ও সমাজের নিকৃষ্ট মেয়েরা যে সন্তান জন্ম দেবে সে
সমাজের অন্যতম নেতা হবে।
২৩। অবৈধ জারজ সন্তানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ।
২৪। সমাজে সম্মানিত কুলীন ভদ্রলোকগুলো কোণঠাসা হয়ে
যাবে আর নিকৃষ্ট অসম্মানী লোকগুলো বেপরোয়া সাহসী হবে।
২৫। বড়কে সম্মান করবে না। ছোটকে স্নেহ করবে না।
২৬। সমাজে নেতাদের নেতৃত্ব বেড়ে যাবে বিশ্বস্ততা কমে
যাবে।
২৭। উলঙ্গ আর বেহায়াপনার প্রতিযোগিতায় নারীরা
ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হবে।
২৮। জেনা ব্যাভিচার আর মদপান বেড়ে যাবে।
২৯। প্রকৃত আত্মীয়দের ছেড়ে বন্ধু-বান্ধবদের আতিথেয়তা বেড়ে
যাবে।
৩০। সমাজে ফাসাদ দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে।
৩১। অযোগ্য ও অসৎ ব্যক্তিরা সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতা
নির্বাচিত হবে।
৩২। মসজিদগুলো চাকচিক্য ও জাঁকজমকপূর্ণ হবে। লোকেরা
পরস্পর মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে।
৩৩। ঘন ঘন বাজার/মার্কেট নির্মিত হবে।
৩৪। সহজ সরল ব্যক্তিরা অবহেলার পাত্র হবে আর প্রতারকদের
চালাক চতুর বলে প্রশংসা করা হবে।
৩৫। দুনিয়ার সম্মান ও সম্পদ অর্জনের জন্য ইসলামী জ্ঞান (ইলম)
শিক্ষা ও প্রচার করা হবে।
৩৬। ইহুদী, খৃস্টানদের মত মুসলিমদেরও লক্ষ্য, উদ্দেশ্য হবে
দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান আর ক্ষমতা অর্জন।
মুসলিম ভাই ও বোনেরা, একটু ভেবে দেখুন তো উপরে বর্ণিত
কিয়ামতের আলামতগুলো
বর্তমানে দেখা যাচ্ছে কিনা।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
কিয়ামতের ছোট আলামতগুলো প্রকাশিত হয় গেলে হঠাৎ করেই
কিয়ামতের বড় আলামতগুলো
প্রকাশিত হতে শুরু করবে। রাসূল (সাঃ) বলেন, মালা ছিড়ে
গেলে এর দানাগুলো যেমন দ্রুত খসে পড়ে ঠিক সেভাবেই
কিয়ামতের (বড়) আলামতগুলো একের পর এক প্রকাশিত হতে
থাকবে। (তিরমিযী)
১। দুখান (ধোঁয়া)। রক্তিম ধোঁয়া, যা পৃথিবীকে ঢেকে ফেলবে এবং যার প্রভাবে মুমিনদের সামান্য সর্দি-কাশির মত অবস্থা হবে আর কাফেরদের জন্য যা হবে ভয়াবহ আযাব।
২। দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ।
৩। হযরত ঈসা (আঃ) এর অবতরন।
৪। ইয়াজূজ - মাজূজ এর বের হওয়া ।
৫। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়।
৬। দাব্বাতুল আরদ (অদ্ভুত প্রাণী বিশেষ যা মাটি ভেদ করে বের হবে)।
৭। তিনটি ভূমিধ্বস, একটি পূর্ব প্রান্তে, একটি পশ্চিম প্রান্তে আরেকটি জাযীরাতুল আরবে।
৮। আর শেষটি হচ্ছে, ইয়ামান থেকে একটি আগুন বের হবে যা মানুষকে হাশরের ময়দানের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবে। (মুসলিম)
সমাজ যেমন হবে কিয়ামতের আগের -
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দাসি তার মনিবকে প্রসব করবে, তুমি দেখতে পাবে যাদের পায়ে জুতা এবং পরনে কাপড় নেই, নিঃস্ব ও বকরির রাখাল তারা উঁচু উঁচু প্রাসাদ তৈরিতে পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১)
সন্তানরা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করবে। মা-বাবার প্রতি সন্তানের অবাধ্যতা বৃদ্ধি পাবে। তারা তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করবে যেমন মুনিব তার গোলামের সঙ্গে করে।নিচু শ্রেণির মানুষ জাতির শাসক ও নেতা হবে। অযোগ্য ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা হবে। যখন চরিত্র দুর্বল হবে। সামাজিক রীতি ও মূল্যবোধ পাল্টে যাবে। তাতে ভালো-মন্দের মিশ্রণ ঘটবে। মানুষের হাতে প্রচুর অর্থ-সম্পদ থাকবে। বিলাসিতা ও অপচয় বেড়ে যাবে। মানুষ গর্ব করবে অট্টালিকার উচ্চতা আর ভোগের সামগ্রী ও আসবাবপত্র নিয়ে। যদিও তারা ফকির ছিল ও দুঃখ-কষ্টে জীবন কাটাত এবং তারা অন্যের দয়ায় জীবন যাপন করত।
আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তারা আপনাকে জিজ্ঞেস করে কিয়ামত কখন ঘটবে? আপনি বলুন! প্রকৃতপক্ষে তার জ্ঞান শুধু আমার প্রতিপালকের কাছেই আছে। শুধু তিনিই যথাসময়ে তা প্রকাশ করবেন; তা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা হবে। আকস্মিকভাবেই তা তোমাদের ওপর আপতিত হবে। ...’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৮৭)
সেদিন প্রাকৃতিক শৃঙ্খলা ভেঙে যাবে। ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে কিয়ামত সংঘটিত হবে। আসমান-জমিন, পাহাড়-পর্বত, গ্রহ-নক্ষত্র কোনো কিছুই আপন অবস্থায় অবশিষ্ট থাকবে না।
অন্যত্র আল্লাহ ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবী যখন আপন কম্পনে প্রচণ্ড রকম প্রকম্পিত হবে এবং পৃথিবী তার ভার বের করে দেবে, মানুষ বলবে -এর কী হলো? সেদিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। কেননা তোমার প্রতিপালক তাকে আদেশ করবেন।’ (সুরা জিলজাল, আয়াত : ১-৫)
মহান আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে বিচারদিনের জন্য তৈরি হওয়ার তৌফিক দিন, আমীন।
© 2019 BoiBazar.com All Rights Reserved | Design by BoiBazar.com