‘আমার পাঁচমিশেলি মন খারাপের পরেও রে তোর সঙ্গে আছি’ - লাইনগুলো শুনে চমকে উঠেছিলেন শমীক।শহর থেকে অনেক দূরে শান্তি নদীর ধারের গ্রাম মনকাড়ায় এমন কথা শুনতে পাবেন ভাবেননি। আরও অবাক হলেন শুনে যে সেই কবিতা লিখেছেন গ্রামের মেয়ে শবনম। যে কিনা চা-বিক্রি করে চালায় সংসার। শমীকের কথায় শহরে আসে শবনম। একটা চাকরিও পায় সাহিত্যপ্রেমী মানুষ সামসুদ্দিন সাহেবের সহায়তায়। তার সামনে খুলে যায় এক আলো ঝলমল রূপকথার জগৎ। তার সঙ্গে চোখে পড়ে শহরে জীবনে পাঁচমিশেলি মন খারাপ-এর মতো অনেক ঘটনা। তবু মন্দ লাগে না তার। সে চায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে। গ্রাম ছেড়ে এলেও গ্রামের মানুষকে ভোলেনি শবনম। আর তাই গ্রামের বাউল মিন্টু ভাইয়ের চিকিৎসায় সে ঝাঁপিয়ে পড়ে সর্বশক্তি নিয়ে। অন্তরাল থেকে সাহার্য্য করেন সাহিত্যক শমীক। কিন্তু কেন? শবনমের না হয় নাড়ির টান তার গ্রাম মনকাড়ার সঙ্গে। আর পুরোপুরি নগরজীবনে অভ্যস্ত মধ্যবয়সী শমীকের? তাঁর টান কীসে? তাঁরও তো কিছু বলার থাকতে পারে। কী সে কথা.... ওপার বাংলার পটভূমিতে এক অনবদ্য উপন্যাস।
সমরেশ মজুমদার
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১০ মার্চ ১৯৪৪।
তাঁর শৈশব এবং কৈশাের কেটেছে জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের চা বাগানে। লেখাপড়ায় মন বসতাে না একদমই। ইচ্ছে ছিল নায়ক হবেন। তাই জলপাইগুড়ির বন্ধুদের নিয়ে সাজাতেন নাটকের দল। বাজারের জন্য দিদিমার দেয়া টাকা বাঁচিয়ে তাও খরচ করতেন বন্ধুদের নিয়ে। ষােলাে বছরের এক তরুণ সমরেশ কলকাতায় আসেন ১৯৬০ সালে। ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজে, বাংলায়। এখানেও শুরু হলাে থিয়েটার আর নাটক লেখা, গল্প লেখার কাজ। নাটক লিখলেও নাটক হতাে না। অভিনয়ও জমছে না ঠিকমতাে। ততদিনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাসের সার্টিফিকেট জুটলাে কপালে। কিন্তু নায়ক হওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হলাে না। এবার নাটক বাদ। গল্প লেখায় সময় ব্যয়। ১৯৭৬ সালে দেশ পত্রিকায় ছাপা হলাে তাঁর প্রথম উপন্যাস দৌড়। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। প্রকাশিত গ্রন্থ ২১৫।
সমরেশ মজুমদার ১৯৮২ সালে পান ‘আনন্দ পুরস্কার'। কালবেলা উপন্যাসের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান ১৯৮৪ সালে।