বাংলাদেশ চর্চা (চতুর্দশ খন্ড) বইটি লিখেছেন মুনতাসীর মামুন
বিশ শতকের সাড়া জাগানাে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক মতবাদ হলাে কমিউনিস্ট আন্দোলন। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক মতাবাদের এ ধারার সূচনা হয় এবং তা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতবর্ষ তথা বাংলা এর প্রভাব থেকে দূরে ছিল না। রুশ বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয় এবং এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলায়ও তা বিস্তার লাভ করে। অবশ্য বাংলায় যে কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে ওঠে তার সাথে রুশ বিপ্লবের প্রকৃতিতে একটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। তা হলাে এশিয়া তথা ভারতবর্ষে কমিউনিস্ট আন্দোলন বিস্তার লাভ করে কৃষক শ্রেণিকে কেন্দ্র করে আর রুশ বিপ্লবের স্লোগান ছিল শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে সর্বহারা একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা। ঊনিশ শতকে ইউরােপে শিল্প বিপ্লবের প্রভাবে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তার প্রেক্ষাপটে কার্ল মার্কস এই তত্ত্বের নির্মাণ করেন, যা মূলত কমিউনিজম হিসেবে পরিচিতি। এশিয়ার কৃষি নির্ভর অর্থনীতিতে মার্কসের তত্ত্বে নতুন মাত্রা যােগ হয়। যেহেতু বিশ শতকের প্রথমার্ধে এশিয়ার দেশগুলাে শিল্পে একেবারেই অনগ্রসর ছিল তাই সেখানে গড়ে ওঠেনি আন্দোলন পরিচালনার মতাে শক্তিশালী শ্রমিক শ্রেণি। কিন্তু ঔপনিবেশিক শােষণের জালে আবদ্ধ কৃষক শ্রেণি যখন সাম্যের বার্তা শােনে তখন নিজ নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। যে কারণে দেখা যায় বিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারত তথা বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলন একচ্ছত্রভাবে পরিচালিত হয়েছে কৃষক শ্রেণিকে কেন্দ্র করে। আলােচিত প্রবন্ধে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত পূর্ব বাংলায় কমিউনিস্ট পার্টির সূচনা ও কার্যক্রম এবং গতি প্রকৃতি সম্পর্কে আলােচনা করা হলাে। উল্লেখ পশ্চিম বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের ওপর। অনেক গবেষণা ও লেখালেখি হলেও পূর্ব বাংলায় ১৯৪৭ সাল পূর্ব কমিউনিস্ট পার্টি ও আন্দোলনের ওপর তেমন লেখালেখি হয়নি।
মুনতাসীর মামুন
মুনতাসীর মামুনের জন্ম ১৯৫১ সালে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে এম. এ.. পিএইচ. ডি. ডিগ্রি লাভ করেছেন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। লেখালেখি করছেন ১৯৬৩ সাল থেকে। ছাত্রজীবনে জড়িত ছিলেন ছাত্র-আন্দোলনে এবং ১৯৬৯ সাল থেকে এ-পর্যন্ত অংশগ্রহণ করেছেন প্রতিটি সাংস্কৃতিক ও গণআন্দোলনে। স্বাধীন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত প্রথম ডাকসু নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন সম্পাদক। একই সময়ে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি। তাঁর সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশিত হয় ডাকসু’র মুখপত্র ছাত্রবার্তা। এছাড়াও বাংলাদেশ লেখক শিবির ও বাংলাদেশ লেখক ইউনিয়নের ছিলেন তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও যথাক্রমে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সম্পাদক। ঢাকা নগর জাদুঘরের তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন তিনিও একজন । এছাড়াও তিনি জড়িত বিভিন্ন একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। বাংলাদেশে লেখালেখির জগতে মুনতাসীর মামুন একটি বিশিষ্ট নাম। সমসাময়িককালে তার মতাে পাঠক নন্দিত লেখক খুব কমই আছে। গল্প, কিশােরসাহিত্য, প্রবন্ধ, গবেষণা, চিত্রসমালােচনা, অনুবাদ ইত্যাদিতে তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ ও সেই সাথে রাজনৈতিক ভাষ্যে অর্জন করেছেন বিশেষ খ্যাতি । উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার একাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭০। বাংলা একাডেমী পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক পুরস্কার, ড. হিলালী স্বর্ণপদক পুরস্কার, প্রেসিডেন্ট পুরস্কার (১৯৬৩), মার্কেন্টাইল ব্যাংক স্বর্ণপদক ইত্যাদিতে তিনি সম্মানিত। স্ত্রী ফাতেমা মামুন ছিলেন একজন ব্যাংকার ।