ভূমিকা সভ্যতার আদিতে পৃথিবী ছিলো ছোট্টো। পৃথিবীটা আকৃতিতে ছোটো ছিলো একথাটা ঠিক নয়- সংকীর্ণ ছিলো মানুষের জ্ঞানের পরিধি। তখন সবাই যে যার আওতায় একটি করে নিজস্ব জগৎ সৃষ্টি করে শান্তিতে বসবাস করতো।
তারপরই একদিন মানুষকে পেয়ে বসলো অজানাকে জানবার নেশায়। তখন সে ঘর থেকে পা বাড়ালো বাইরে। আবিষ্কার করলো বাইরের এক অজানা পৃথিবীকে। এমনি করেই শুরু। অজানাকে জানার সেই নেশাতেই মানুষ ছুটে গেলো দূর থেকে বহু দূরে। তারা দুর্বার সাহসে পাড়ি দিলো দূরন্ত সাগর, পায়ে হেটে পার হলো দুস্তর মরু আর দুর্গম তুষার প্রান্তর।
সেইসব অভিযানের কী যে ভয়ংকর নেশা, কী দুর্জয় সাহস তা ভাবলেও বিস্মিত হতে হয়। তারাই মৃত্যুকে তুচ্ছ করে এনে দিয়েছিলো ভিন্ন জগতের খবর। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই আমরা জানতে পেরেছি আজকের সারা বিশ্বকে।
‘বিশ্বজয়ের কথা’ মূলত তাদেরই বিচিত্র কাহিনী। সেই আদিকাল থেকে আজ পর্যন্ত যে সমস্ত দুঃসাহসিক ভৌগলিক অভিযান হয়েছে বইটিতে তাদেরই কথা তুলে ধরা হয়েছে ধারাবাহিক ভাবে।
বইটির কিছু কিছু অংশ ইতিপূর্বে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিলো, তবে বর্তমান গ্রন্থে সংকলনের সময় তার ব্যাপক পরিবর্তন করা হয়েছে।
বইটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন করে প্রকাশ করার জন্য কাকলী প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী জনাব এ, কে, নাছির আহমেদ সেলিম যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন ও আন্তরিকতা দেখিয়েছেন তার জন্য জানাই কৃতজ্ঞতা। সতর্কতা সত্ত্বেও কিছু কিছু মুদ্রণ প্রমাদ রয়ে গেলো। আগামী সংষ্করণে শুধরে নেবার চেষ্ঠা করবো।
যিনি নতুন প্রজন্মের জন্য সাহিত্য ও জ্ঞানের বৃহত্তর দুয়ার খুলে দেওয়ার প্রয়াস পেয়েছিলেন, তিনি এক নিঃসঙ্গ শব্দ-অভিযাত্রী। বিশ্বের বৃহত্তর জগৎ থেকে সংগৃহীত তথ্য নিয়ে তিনি সৃষ্টি করেছেন এক নতুনধারার সাহিত্য। ভবেশ রায়-এর জন্ম ১৯৪৭ সালের ৮ জুলাই। ঢাকা জেলার ধামরাই থানার বাইশাকান্দা গ্রামে। শিক্ষাজীবন শুরু গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, তারপর কুসুরা আব্বাস আলি হাইস্কুলে। উচ্চ মাধ্যমিক করটিয়া সা’দত কলেজে। স্নাতক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্নাতকোত্তর (বাংলা সাহিত্য) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু। অধুনালুপ্ত দৈনিক সমাজ পত্রিকার ফিচার এডিটর ছিলেন। তারপর সমবায় কর্মকর্তা (জনসংযােগ) হিসেবে ১৯৯৬ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছা অবসর গ্রহণ। স্কুলজীবন থেকেই লেখালেখি শুরু। বর্তমানে সার্বক্ষণিক লেখালেখিতে নিয়ােজিত। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা একশ'র বেশি। কিশাের বিজ্ঞান, বিজ্ঞান প্রজেক্ট এবং জীবনী সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। তাঁর এ নিজস্ব বলয়ের পরিধি যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে পাঠকপ্রিয়তাও। ২০০৪ সালে তিনি অর্জন করেছেন লেখক সম্মান পুরস্কার (কলকাতা)।