ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ সৈয়দ কুতুবউদ্দিন বিখ্যাত উর্দু কবি দাগের গজল শোনান আমাদের ‘দিল্লি সে চলে দাগ, কারো সায়র ডেকান কি, গওহর কি হুয়ি কদর, সুমুন্দর সে নিকাল কে। হায়দারাবাদ রহে তা-বা, কেয়ামত কায়েম এহি, অ্যায় দাগ, মুসলমান কি এক বসতি হ্যায়।’
[হে দাগ, দিল্লি ছাড়। দাক্ষিণাত্যের পথে ভ্রমণ কর। মুক্তার দাম তো তখনই হয় যখন সে সমুদ্রের বাইরে আসতে পারে। হায়দারাবাদ কেয়ামত পর্যন্ত উজ্জ্বল থাক, চিরঞ্জীব হোক, কারণ এই তো একমাত্র স্থান যেখানে মুসলমানরা বাস করতে পারে।]
কবি দাগের সেই শুভকামনা পূর্ণ হয়নি। পূর্ণ হতে দেয়া হয়নি। স্বাধীন হায়দারাবাদ বেঁছে থাকেনি। বেঁচে থাকতে পারেনি। বেঁচে থাকতে দেয়া হয়নি। মুসলমানদের আবাসস্থল হলেও সে নিজ অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারেনি। দাগের কবিতা লেখার ৫০ বছরের মধ্যে হায়দারাবাদ ভারতীয় আধিপত্যবাদের শিকারে পরিণত হয়ে রাষ্ট্র হিসেবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
হায়দারাবাদ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে আবারও মনে পড়ল গালিবের কবিতা, ‘নাহ্ গুলে নগমহ্ হু, না পরদহ সাজ, মৈ, হু আপনি শিকস্ত-কী আওয়াজ।’
[কবিতার ফুল নই, সেতারের পরদা নই, আমি কেবল একটি আওয়াজ, পরাজয়ে ভেঙে পড়ার আওয়াজ।]
শুধু যে পরাজয়ে ভেঙে পড়ার আওয়াজ তাই নয়। মৌনতার আবরণে ঢাকা একটি গোরস্থানের নিভে যাওয়া প্রদীপ হলো হায়দারাবাদ।
আবদুল হাই শিকদার
আবদুল হাই শিকদার। জন্ম ১লা জানুয়ারি ১৯৫৭। দুধকুমার নদীতীরে, কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারীর দক্ষিণ ছাট গোপালপুর গ্রামে। পিতা কৃষিবিদ ওয়াজেদ আলী শিকদার। জননী হালিমা খাতুন। মওলানা ভাসানীর দীর্ঘ ছায়ায় আশৈশব বেড়ে ওঠা। প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার বেশির ভাগ কেটেছে রংপুরের কারমাইকেল কলেজে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন স্নাতক সম্মান, ঢাকা থেকে স্নাতকোত্তর। তার পুরো পরিবার অংশ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। প্রিয় কবি মনসুর বয়াতী, লালন ফকির, চণ্ডীদাস, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, ফররুখ আহমদ। স্বপ্ন ছিল চে গুয়েভারা হওয়ার। লেখালেখির শুরু স্কুল জীবনে। বিকাশ আশির দশকে। পেশা সাংবাদিকতা। বর্তমানে তিনি ঐতিহ্যবাহী ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজে’র নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি সরকারি নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নিয়মিত সাহিত্য মাসিক এখন-এর মূল স্থপতি তিনি। কবিতা, ছড়া, জীবনী, গল্প, গবেষণা, ভ্রমণ, চলচ্চিত্র সব মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। জননেতা অলি আহাদের স্নেহধন্য তিনি। অলি আহাদের জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারও তাঁরই নেয়া।