ইতিহাসের ধুলো কালি (হার্ডকভার)
রাম মন্দির ভেঙে মুসলিম শাসকরা বাবরি মসজিদ নির্মান করেছিল, এমন একটা আজগুবি তথ্যের উপর ভারতীয় শিবসেনা আদালত বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির বানানোর অনুমতি দিয়েছে! আজ এই রায়ের খরব শুনে মনে পড়লো গার্ডিয়ান প্রকাশনী থেকে সদ্য প্রকাশিত পিনাকী ভট্রচার্য লিখিত "ইতিহাসের ধুলোকালি" বইটির কথা। বইটির নাম দেখে ভিতরের মুল বিষয় সম্পর্কে বুঝা যায়না৷ আমি পড়ার শুরুতে ভেবেছিলাম ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ইতিহাস নিয়ে লিখিত বই। আসলে লেখক এখানে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিমদের উপর যুগযুগ ধরে চলা মিথ্যা অভিযোগ গুলোর সঠিক তথ্য ধুলোকালি ঝেড়ে তুলে এনেছেন৷ সেইদিক বিবেচনায় বইটির নাম যথার্থ। পাঠকদের ভাল করে বুঝতে নামের সাথে লেখার বিষয়বস্তুর ট্যাগ লাইন দেওয়া জরুরী ছিল। এই বইটিতে সুলতান মাহমুদ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুসলিমদের উপর ভারতীয় এবং এদেশীয় সেক্যুলার সম্প্রদায় কিভাবে মিথ্যা অভিযোগ চাপিয়ে রেখেছে সেটা সুন্দরভাবে তথ্য দিয়ে তুলে ধরেছেন। আমরা ইতিহাসে পড়ি লালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করেছিলো সুলতান মাহমুদ! আসলেই কি তাই?? লেখক প্রমান করেছেন একেবারে মিথ্যা এই অভিযোগ। মুসলিম শাসকরা মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মান দূরের কথা বরঞ্চ হাজার হাজার মন্দির বানিয়ে দিয়েছে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব। অথচ এই সম্রাটকে সবচেয়ে বেশি গালাগাল করে হিন্দু ও এদেশীয় সেক্যুলার সমাজ। কারন হলো উনি অন্যান্য সম্রাটের থেকে একটু বেশি আল্লাহ ভীরু ছিলেন। মুসলিমদের উপর হিন্দু এবং সেক্যুলার সমাজের আরোপিত মোটাদাগের অভিযোগ গুলো কতটা যে মিথ্যা সেটা লেখক অসংখ্য তথ্য দিয়ে প্রমান করে দিয়েছেন। বাংলাভাষী সকল মুসলিমদের উচিৎ বইটি সংগ্রহ করা।
ইতিহাসের এক ধরনের নিজস্ব রং আছে। পুরো পৃথিবী একজোট হয়েও সে রং বদলাতে পারে না; উলটো নিজের মতো করে রাঙিয়ে যায় পৃথিবীকেই। অবশ্য বর্ণচোরা শ্রেণি ক্ষণিক সময় কৃত্রিম রঙের কারাসাজির আয়োজন করতে পারে। কিন্তু ইতিহাস তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিমায় কারসাজির খেলাঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেখান থেকে বেরিয়ে খাঁটি ও পরিশুদ্ধ ইতিহাস মাথা উঁচু করে ঘোষণা করে- ‘আমি সত্যের পক্ষে।’ ইতিহাসের দেয়ালে মিথ্যার প্রলেপ দেওয়ার অপচেষ্টা পৃথিবীর শুরু থেকেই চলমান। বিপরীতে একশ্রেণির সত্যাশ্রয়ী মানুষ সে মিথ্যা প্রলেপ সরানোর লড়াই জারি রেখেছে। দীর্ঘদিন ধরে কেউ প্রলেপ না সরালে স্বভাবতই ইতিহাসের গায়ে ধুলোকালির স্তূপ জমে যায়। এমন সন্ধিক্ষণে কাউকে না কাউকে ধুলোকালি সরানোর দায়িত্ব নিতে হয়। মিথ্যায় চাপা পড়া ইতিহাসকে ধুয়ে-মুছে নতুন করে সত্যের চাদর পরিয়ে দিতে হবে। জোর করে চেপে দেওয়া ইতিহাসকে শৃঙ্খলমুক্ত করতে হয়। জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট, সমাজচিন্তক ও লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য ইতিহাসের ধুলোকালি মুছতে কলম হাতে তুলেছেন। প্রচলিত ভুল ইতিহাস থেকে ছেঁকে ছেঁকে পরিশুদ্ধ ইতিহাস বের করে এনেছেন। ‘ইতিহাসের ধুলোকালি’ গ্রন্থ বুদ্ধিবৃত্তিক দায়বদ্ধতা থেকে উৎসারিত; যার ফলে আগামী প্রজন্ম নির্মোহ সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানোর উপাত্ত পাবে।