ফ্ল্যাপে লিখা কথা জরিপ নিয়ে দেখা গেছে ,আজকালকার ছেলেমেয়েরা শিবরাম বা শিব্রাম কাউকেই চেনে না। চক্রবর্তী বা চকরবরতিকেও না। অথচ একটা সময় ছিল যখন কোনো পত্রিকায় কি সাতিহ্য সাময়িকীতে শিবরাম চক্রবর্তীর রচনা থাকলে অণ্য সব রচনার পাশে সরিয়ে রেখে প্রথমেই সকলে পড়তেন তাঁর লেখা। কী থাকত সেখানে? থাকত অমলিন হাসি। তার মানে কি হবে এই যে, তিনি হাসির গল্প লিখতেন? না, ঠিক তা নয়। গল্প হয়তো মোটেই হাসির নয়, কিন্তু তবু হাসতে হয় বলবার গুনে। নইলে , মেমসাহেবকে যে এক চ্যাংড়া ছোকরা চড় মেরে বসল তাতে হাসির খোরাক কোথায়?তবু আমরা হাসি। কারণ তাঁর নিজস্ব কথনভঙ্গি ও ভাষার কারুকাজ। বাংলাভাষায় pun সৃষ্টির অভিসংবাদিত সম্রাট তিনি। সেজণ্যেই শিবরামের লেখা গল্প নিজে পড়তে হয়, তবেই হাসা যায়, অন্যের মুখে শুনলে হাসি পায় না। কারণ তখন অন্যের বলায় হাস্যরসের উৎস ঐ বিশেষ ভাষা গাঁথুনি যে আলগা হয়ে যায়। বাংলা সাহিত্যে তাই শিবরামের উপমা শিবরাম নিজেই । তাঁর কোনো পূর্বসুরী নেই, উত্তরসূরিও নেই। বাংলা ভাষার রস উপলব্ধির করার জন্যে তিনি যে আসর সাজিয়ে সবাইকে ডাক দেন তাতে সাড়া না দিয়ে কারও উপায় নেই। একমাত্র অন্ধ ও বধির ছাড়া শিবরামের রচনার স্বাদ পাঠকের চোখ ও কানকে চাখতেই হবে। রেহাই পাওয়ার সাধ্য নেই কারও। বাংলাদেশের এই প্রথম শিবরাম চক্রবর্তীর ছোটগল্পের এত সুচারু ও সুবৃহৎ সংকলন প্রকাশিত হল। কিশোরবয়সীদের উপযোগী এ-সব গল্পের বাইরেও তাঁর অন্য ধরনের বয়স্কপাঠ্য রচনা রয়েছে। সে বইও প্রকাশ করা যাবে হয়তো অচিরেই।