বাপ-মা হারা কিশোর নাগা। মাঝির ছেলে। নিদারণ অভাবের সঙ্গে প্রতিমুহূর্তের লড়াই। বলিষ্ঠ শরীর, দুচোখে স্বপ্ন। নাগা স্বপ্ন দেখে, সে সমুদ্রে যাবে। তারপর? চাকরি মেলে, বড়মানুষ যাদববাবুর নৌকায়। একদিন যাদববাবু লঞ্চ কিনলেন। লঞ্চ পাড়ি দেবে সাগর। নাগার দুচোখে ঢেউয়ের ঝিলিক-এবার স্বপ্ন সত্যি হবে। লঞ্চে সঙ্গী হয় নাগা। কিন্তু যাদববাবু দেনার দায়ে তখন বিপর্যস্ত, বে-আইনি ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। সে এক দু:স্বপ্নের রাত। ভয়ানক ঝড়-জল। পায়ে দাঁড়িয়ে পুলিশবাহিনী। তারা খবর পেয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে লঞ্চের মুখ ঘুরল সমুদ্রের দিকে। নিচের কেবিনে অন্যরা। ডেকে দাঁড়িয়ে একা নাগা। প্রবল ঝড়, দৈত্যের মত ঢেউ আছড়ে পড়ছে। তারপর? রোমাঞ্চ-টানটান এই উপন্যাসটিই কালজয়ী কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র সম্পূর্ণ কিশোর উপন্যাস।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
১৯মে ১৯০৮ সালে বিহারের দুমকা শহরে জন্ম। অঙ্কে অনার্স নিয়ে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে ১৯২৮ সালে লিখে ফেললেন প্রথম গল্প অতসী মামী। প্রকাশিত হল ‘বিচিত্রা পত্রিকায় এরপর মাত্র ২১ বছর বয়সে উপন্যাস দিবারাত্রির কাব্য’। আলােড়ন পড়ে যায়। এরপর এক-এক করে অনেক লিখেছেন। তার মধ্যে বিশেষভাবে স্মরণীয়—পদ্মানদীর মাঝি, পুতুলনাচের ইতিকথা, জননী, স্বাধীনতার স্বাদ ইত্যাদি। উল্লেখযােগ্য গল্পগ্রন্থ—প্রাগৈতিহাসিক, আজ কাল পরশুর গল্প, ছােট বকুলপুরের যাত্রী। বৈজ্ঞানিক মতাদর্শে দীক্ষিত এই কথাশিল্পী সারাজীবন চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছেন। সাহিত্য-সাধনা ছিল জীবিকার একমাত্র অবলম্বন কোথাও কখনও আপােস করেননি। প্রয়াণ ৩ ডিসেম্বর ১৯৫৬।