ফ্ল্যাপে লিখা কথা সাহিত্যেরে সবচেয়ে পুরনো কিন্তু সবচেয়ে আধুনিক গল্প হচ্ছে নীতিকথার গল্প। নীতিকথার গল্পের কখনো মৃত্যু নেই। যুগে যুগে শত সহস্র বছরে নীতিকথার গল্প তার শাখা বিস্তারের মধ্য দিয়ে পত্র-পুষ্প পল্লবিত করে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য নীতিকথার গল্পের সম্ভার থেকে মণিকাঞ্চন নিয়ে এই বই রচিত হয়েছে। নীতিকথার গল্প এই ধরনের বই বাংলা ভাষায় ইত:পূর্বে প্রকাশিত হয়নি। নতুন ধরনের এই বই পাঠকদের আনন্দিত করবে, সমৃদ্ধ করবে -এই প্রত্যাশা আমাদের।
ভূমিকা নীতিগল্প লেখার ব্যাপারে আমাকে প্রেরণা দিয়েছেন, উদ্বুদ্ধ করেছেন, উৎসিাহিত করেছেন শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। একজীবনে তাঁর কাছে ঋণের শেষ নেই।আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ন একটি ঘটনা হচ্ছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত হওয়া এবং আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সঙ্গে ঘনিষ্ট হওয়ার সুযোগ পাওয়া । ‘স্যার’ আমার জীবনটাকেই বদলে দিয়েছেন। জীবনকে চেনা,দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হওয়া, চিন্তাশীল হওয়া, মানুষের জন্য কিছু করা সমস্ত মানবিক গুনাবলি আমরা শিখেছি স্যারের কাছ থেকে এবং লেখালেখির সূচনাপর্বে সায়ীদ স্যার আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন-সে পথে বেয়ে চলার চেষ্টা করেছি। ‘নীতিকথার গল্প’ প্রকাশের পূর্ব মুহূর্তে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেছি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের কথা। তারই প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণায় এই গ্রন্থগুলো লেখা হয়। এমন কী এসব গ্রন্থের পরিকল্পনাও সায়ীদ স্যারের । স্যার সময়াভাবে লেখেননি। আমি চেষ্টা করেছি মাত্র। হাদিসের কথা (যৌথ রচনা) , শেখ সাদীর গল্প, প্রেরণার গল্প,যে গল্প পুরনো হয় না এবং ঈশপের গল্প-এই পাঁচটি বই একত্রে ‘নীতিকথার গল্প’ নামে প্রকাশিত হচ্ছে। এই ধরণের আর গল্প আমার লেখার প্রচন্ড ইচ্ছা আছে। বাংলা শিশু সাহিত্যে ক্রমবিকাশে নীতিকথার গল্প লেখার ধারা অব্যাহত ছিল। ইউরোপীয় সাহিত্য চীন কিংবা আরবি সাহিত্যে নীতিকথার গল্পের চর্চা এখনো অব্যাহত। বাংলা ভাষায় অনুধা নীতিগল্প একেবারেই লেখা হয় না। কিন্তু মনে রাখতে হবে আমাদের প্রাচীন সাহিত্যে ‘হিতোপদেশের গল্প’ রচিত হয়েছে। হিতোপদেশের গল্প আমাদের গর্ব ও ঐতিহ্যের অংশ। বিভিন্ন দেশে-জাতিতে ,কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে নীতিগল্পের সন্ধান পাওয়া যায়। তারই কিছু মণিকাঞ্চন তুলে আনা হয়েছে এই সংকলনে। এইসব ছোট ছোট গল্পের মধ্যে যে মহৎ চিন্তা ও মহৎ ভাবনা লুকিয়ে থাকে সেগুলো কোমলমতি শিশু কিশোরদের প্রেরণা দেবে বলেই বিশ্বাস করি। নীতিকথার গল্প শুধু যে ছোটদের বই -একথা বলব না। বড়রাও এইসব অমর গল্পের রস থেকে বঞ্চিত হবেন না। তাদেরও ভালো লাগবে। নীতিকথার গল্পের আবেদন চিরন্তন ,ফুরিয়ে যায় না। এসব গল্প কখনো পুরনো হয় না। সকল যুগে সকল মানুষের জন্য এইসব গল্প একই রকম উপভোগ্য থাকে। নীতিকথার গল্পের মৃত্যু নেই।
আমীরুল ইসলাম ৫৫ গোলারটেক,মিরপুর-১ ঢাকা
সূচি * হাদিসের কথা * শেখ সাদীর কথা * যে গল্প পুরনো হয় না * প্রেরণার গল্প * ঈশপের গল্প
হায়াত মামুদ
হায়াৎ মামুদের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে, পশ্চিমবঙ্গের। হুগলি জেলার মৌড়া নামে অখ্যাত এক গ্রামে। ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের ১৭ই আষাঢ় (২রা জুলাই ১৯৩৯) তারিখে। ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অভিঘাতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত পিতার হাত ধরে চলে আসতে হয় ঢাকা শহরে । অদ্যাবধি সেখানেই বসবাস। স্কুল-কলেজবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেছেন এ শহরেই। পিএইচ. ডি. ডিগ্রি তুলনামূলক সাহিত্যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, প্রায় প্রৌঢ় বয়সে। রুশ ভাষা অল্পবিস্তর জানেন, অনুবাদের চাকরি করেছেন প্রগতি প্রকাশনে, মস্কোয় সুদূর ও স্বপ্নিল সােভিয়েত ইউনিয়নে বসে। দেশের অভ্যন্তরে চাকরি সর্বদাই শিক্ষকতার প্রথম কলেজে, পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে অবসর-জীবন যাপন করছেন। বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন। শিশুসাহিত্যে দেশ-বিদেশের সারস্বত সমাজের সঙ্গে যােগাযােগ আছে। সৃজনশীল রচনা, অনুবাদ, গবেষণা, শিশুসাহিত্য, জীবনীগ্রন্থ, সাহিত্য-সমালােচনা, ছাত্রপাঠ্য বই ইত্যাদি মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ষাটের কাছাকাছি।
আমীরুল ইসলাম
জন্ম ৭ এপ্রিল ১৯৬৪, লালবাগ, ঢাকা। পিতা প্রয়াত সাইফুর রহমান। মাতা প্রয়াত আনজিরা খাতুন। পিতৃব্য প্রয়াত কবি হাবীবুর রহমান, খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক। শিশুসাহিত্যের সকল মাধ্যমে স্বচ্ছন্দ। ২০০৬-এ পেয়েছেন বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার। সবচেয়ে কম বয়সে ‘খামখেয়ালি’ ছড়াগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন শিশু একাডেমির অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার। সিকান্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০০৩), পদক্ষেপ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৫), ছােটদের পত্রিকা পুরস্কারও (২০০৭) পেয়েছেন। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৫০টির অধিক। সবই শিশুসাহিত্য। দেশের খ্যাতিমান সকল প্রকশনা সংস্থা থেকে এক বা একাধিক বই প্রকাশ পেয়েছে। দশ বছর সম্পাদক ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত কিশাের-তরুণদের উৎকর্ষধর্মী মাসিক ‘আসন্ন’র। অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার ছােটদের প্রথম চার রঙের কিশােরদের পাতা সম্পাদনা করেছেন পাঁচ বছর। চ্যানেল আই-তে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অনুষ্ঠান বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে সিনিয়র প্রােগ্রাম ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত। সাপ্তাহিক'এর প্রকাশকও তিনি। কৌতুকপ্রিয়, আডডাবাজ, জীবন রসিক, ভােজকপ্রিয় আমীরুল ইসলাম পৃথিবীর অধিকাংশ বিখ্যাত শহর ঘুরেছেন। পুরনাে বই ও চিত্রকলা সংগ্রহ করে থাকেন । প্রিয় সখ বইপড়া, দাবা খেলা, গান শােনা।