সন্ধ্যে থেকে ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল হঠাৎ করে বৃষ্টিটা চেপে এল। জব্বার নিচু গলায় একটা অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করে উইন্ডশীন্ড ওয়াইপারটা আরেকটু দ্রুত করে দেয়। ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করে ওয়াইপার দুটো গাড়ির কাঁচ পরিষ্কার করতে থাকে কিন্তু অন্ধকার দুর্যোগময় রাতে সেটা খুব কাজে আসে না, গাড়ির হেডলাইট মনে হয় সামনের অন্ধকারকে আরাে জমাট বাধিয়ে দিচ্ছে। রাস্তার অন্যদিক থেকে দৈত্যের মত একটা ট্রাক চোখ ধাঁধানাে হেডলাইট জ্বালিয়ে প্রচণ্ড গর্জন করে বিপজ্জনকভাবে পাশ কাটিয়ে গেল- পানির ঝাপটায় গাড়ির কাঁচ মুহূর্তের জন্যে অন্ধকার হয়ে যায়, প্যাসেঞ্জার সিটে বসে থাকা দবির কজির কাছে কাটা হাতটি সামনে এগিয়ে অদৃশ্য কিছু একটা ধরে ফেলার ভঙ্গি করে বিরক্ত হয়ে বলল, "আস্তে, জব্বার আস্তে।" জব্বার অন্ধকারে দেখা যায় না এরকম একটা রিকসা ভ্যানকে পাশ কাটিয়ে দাঁত বের করে হেসে বলল, "ভয় পাবেন না ওস্তাদ। আমি কালা জব্বার।" দবির শীতল গলায় বলল, "সেইটাই ভয়।" "কেন ওস্তাদ। এইটা কেন বললেন? "বলছি কারণ তাের কোন কাণ্ডজ্ঞান নাই। জব্বার আড়চোখে দবিরের মুখটা দেখার চেষ্টা করে বােঝার চেষ্টা করল দবির এটা ঠাট্টা করে বলেছে কি না। অন্ধকারে দবিরের মুখ দেখা যাচ্ছিল না তাই সে ঠিক বুঝতে পারল না। তবুও সে কথাটাকে একটা হালকা রসিকতা হিসেবে ধরে নিয়ে প্রয়ােজন থেকে জোরে শব্দ করে হেসে বলল, "ওস্তাদ, আমার হাতে স্টিয়ারিং হুইল কখনাে বেঈমানী করে নাই।" দবির দাঁতে দাঁত ঘষে বলল, "তাহলে কোনটা বেঈমানী করেছে?" জব্বার ভিতরে ভিতরে চমকে উঠে, হঠাৎ করে ভয়ের একটা শীতল স্রোত তার মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে যায়। প্যাসেঞ্জার সিটে বসে থাকা ছােটখাটো এই মানুষটি যার বাম হাতটি কজি থেকে কাটা, শহরতলী এলাকায় কজি কাটা দবির নামে কুখ্যাত। মানুষটির নিষ্ঠুরতার কথা অপরাধীদের অন্ধকার জগতে সুপরিচিত।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
মুহম্মদ জাফর ইকবাল জন্ম : ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২, সিলেট। বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং বেল কমিউনিকেশান্স রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ আঠার বছর পর দেশে ফিরে দীর্ঘদিন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক, পুত্র নাবিল এবং কন্যা ইয়েশিম।