এই গ্রন্থে যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ (টুইন টাওয়ার হামলা) থেকে ২৬/১১ (মুম্বাই হামলা), বুরহান ওয়ানি থেকে কুলভূষণ যাদব- ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক সবকিছু দেখা যাবে ISI ও RAW-এর দৃষ্টিকোণ থেকে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই গুপ্তচর সংস্থা ISI ও RAW এর সংশ্লিষ্ট লোকদের সাথে কথা বলে, বিশেষ গবেষণায় রচনা করা হয়েছে এই বই। বিশ্বের বিভিন্ন গুপ্তচর সংস্থা নিয়ে লেখার জন্য বিখ্যাত অ্যাড্রিয়ান লেভি ও ক্যাথি স্কট-ক্লার্ক লেখক জুটি তুলে ধরেছেন রোমহর্ষক কাহিনী। ১৯৬০ সাল থেকে শুরু করে ভারত ও পাকিস্তান এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর জটিল ইতিহাস দেখা যাবে এতে। ভারতের পার্লামেন্ট হামলা থেকে পুলওয়ামা, ৯/১১ থেকে শুরু করে ওসামা বিন লাদেনের হত্যা, সন্ত্রাসের ছায়াবাহিনীর উত্থান থেকে কুলভূষণ যাদবের পতন এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা গ্রন্থবদ্ধ হয়েছে, যা এই অঞ্চলের রাজনীতি-অর্থনীতি বদলে দিয়েছে। উভয় শিবিরের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বলা হয়েছে তাদের কার্যকলাপ, এবং সেই সাথে তুলে ধরা হয়েছে সিআইএ ও অন্যান্য গুপ্তচর সংস্থার ধ্বংসাত্মক প্রভাব।
সিআইএ ও বিশ্ব মোড়লদের হস্তক্ষেপের মাঝে কীভাবে আইএসআই অন্ধকার শক্তির বিরুদ্ধে নিজেদের বাঁচানোর জন্য লড়াই করেছিল, একইসাথে আমেরিকার অর্থায়ন নিয়ে নিজেদের বিক্রি করেছিল তার লোমহর্ষক কাহিনী আছে এই বইয়ে। অন্যদিকে, ভারতের RAW কীভাবে আমেরিকার নজর কাড়ার চেষ্টা করেছিল তাও জানা যাবে এখানে। কাশ্মীর, আফগানিস্তান, তালেবানের উত্থান, বিন লাদেনকে ধরার কাহিনী, ভারতের মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলা এবং সর্বশেষ পুলওয়ামা সংঘর্ষের নেপথ্যের কারণ ও ঘটনা জানতে সাহায্য করবে এই বই। গ্রন্থকারদ্বয়ের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং কাহিনীর বিন্যাস বইটিকে এমন করে তুলেছে যে একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে রাখা যাবে না। আর হ্যাঁ, এর মধ্যে বাংলাদেশও আছে।
দ্য রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) ভারতের গোপন বৈদেশিক গুপ্তচর সংস্থা। সবচেয়ে কম জানা সং¯'াগুলোর অন্যতম। প্রকাশ্যে র-এর সম্পর্কে তেমন কোনও তথ্য নেই। একটা স্পাই এজেন্সির জন্য সেটাই স্বাভাবিক। এই সংস্থাটা কী, এর কাঠামো কী, এর ভূমিকা আর ভবিষ্যৎ-দৃষ্টি কী? কেন এটা গঠন করা হয়েছে? কারা এটি পরিচালনা করেন? চীনের সঙ্গে যুদ্ধকালে ভারতের গোয়েন্দাবৃত্তির ব্যাপক ব্যর্থতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই সংস্থার জন্ম ১৯৬৮ সালে। বাংলাদেশ গঠনে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে র। তাছাড়া অত্যন্ত সফল অভিযান চালিয়েছে ফিজি, আফগানিস্তান ও শ্রীলংকায়। উপমহাদেশে পাকিস্তানের স্পাই এজেন্সি আইএসআই-এর চক্রান্ত প্রতিহত ও নস্যাৎ করেছে। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও অভিযান চালিয়েছে র। ইরান-ইরাক যুদ্ধে পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। গুপ্তচরবৃত্তির সাহায্য না নিয়ে কোনও দেশ বিশ্বে তার প্রভাব বৃদ্ধি করতে পারে না। ভারতের অথনৈতিক বিকাশ ও প্রভাব র-এর সাফল্যের প্রমাণ। অনুসন্ধানী সাংবাদিক যতীশ যাদব বাস্তব এজেন্টদের জীবন অনুসরণ করেছেন এবং বাস্তব পরিস্থিতিতে তাদের ক্রিয়াকলাপের মানচিত্র তৈরি করেছেন। ভারতীয় স্পাইদের সঙ্গে তার আলাপচারিতায় উঠে এসেছে একটা গোপন অভিযান প্রকৃতপক্ষে কীভাবে চালান হয়।
যতীশ যাদব
নয়া দিল্লির অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিক যতীশ যাদব (Yatish Yadav)। দুই যুগের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা করছেন, এবং প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি বিভিন্ন গোয়ান্দা সংস্থার কার্যক্রম কভার করে আসছেন, বিশেষত কাশ্মীরের ওপর উনি প্রচুর কাজ করেছেন। ডিজিটাল মিডিয়ার সুবাদে তিনি হয়ে উঠেছেন একজন পেশাদার আলোকচিত্রি। এরপর তিনি টেলিভিশনের দিকে চলে আসেন এবং সিনেমা তৈরি নিয়ে পড়াশোনা করেন। নেপাল থেকে পরিচালিত ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান ট্রাফিকিং রিং নিয়ে তৈরি ডকুমেন্টরি "রোপস ইন দেয়ার হ্যান্ডস" (Ropes in their Hands" - এর জন্য তিনি ২০০৫ সালে নিউ ইয়র্ক ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বেস্ট ডিরেক্টর হিসেবে মনোনীত হন। সাংবাদিক জীবনে তিনি ভারত ও আমেরিকার বেশ কিছু প্রথম সারির পত্রিকা এবং টিভি নেটওয়ার্কে কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি Network18-এ অ্যাসোসিয়াট এডিটর হিসেবে কর্মরত আছেন। যতীশ যাদবের লেখা অত্যন্ত আলোচিত ও সমালোচিত অনুসন্ধানমূলক বই RAW: A History of India's Covert Operations। বইটির বাংলা অনুবাদ শিগগিরই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে 'সূচীপত্র' থেকে, যার অনুবাদ করেছেন দেশের বিশিষ্ট অনুবাদক প্রমিত হাসান। বইটিতে উঠে এসেছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র-এর বিভিন্ন গোপন মিশনের কথা, বিশেষত এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে র-এর কর্মতৎপরতা। বাংলাদেশ নিয়েও অনেক গোপন কথা জানা যাবে এই বই থেকে।
আড্রিয়ান লেভি
আড্রিয়ান লেভি ও ক্যাথি স্কট-ক্লার্ক দ্য সানডে টাইমস ও দ্য গার্ডিয়ান-এর পুরস্কারবিজয়ী প্রাক্তন লেখক। তারা এইচবিও, পিবিএস, বিবিসি ১ বিবিসি ২, সি৪, ফেসবুক ও ভাইস টিভির বিদেশি সংবাদদাতা হিসেবে তথ্যচিত্রও তৈরি করেছেন। ২০১০ সালে তাদের চলচ্চিত্র 'সিটি অফ ফিয়ার' পাকিস্তানের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বছরের চিত্র তুলে ধরে এডিনবরা আন্তর্জাতিক টেলিভিশন উৎসবে মনোনীত হয়। তাদের সিও ডকুমেন্টারি টর্চার ট্রেইল' ২০১৩ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার জিতেছে, প্রিয়ার্সন পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল, এবং ররি পেকস-এ চূড়ান্ত মনোনয়নে ছিল। চীনা মার্ডার মিস্ট্রি, কমিউনিস্ট পার্টির হত্যাকারীর তদন্ত, বাফটার জন্য দীর্ঘ তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল এবং মন্টে কার্লো টেলিভিশন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। তারা এইচবিওতে অ্যামি অ্যাওয়ার্ড’ বিজয়ী ভাইস সিরিয়ালের পর্বগুলো প্রযোজনা করেছিলেন। বর্তমানে তারা একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী অ্যালেক্স গিবনি পরিচালিত 'ফরএভার প্রিজনার' নামে একটি ফিচার ডকুমেন্টারি তৈরি করছেন, যা সিআইএ-এর বর্ধিত জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য তুলে ধরছে। তাদের প্রথম বই দ্য স্টোন অফ হেভেন বর্ডারস নিউ ভয়েসেস প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত মনোনয়নে ছিল। তাদের দ্বিতীয় বই অ্যাম্বার রুম ছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস বুক অফ দ্য ইয়ার। ডিসেপশন রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট, ডিউক অফ ওয়েস্টমিনস্টারের সামরিক ইতিহাসের পদকের চূড়ান্ত মনোনয়নে ছিল। পেঙ্গুইন থেকে প্রকাশিত দ্য মিডো রামনাথ গোয়েঙ্কা পুরস্কার জিতেছে। ২৬/১১-এর ঘটনা অবলম্বনে লেখা 'সিজ' নন-ফিকশনের জন্য ডিডব্লিউএ গোল্ড ড্যাগার পুরস্কার জিতেছে। তাদের ষষ্ঠ নন-ফিকশন বই দ্য এক্সাইল, বিন লাদেনদের কাহিনী নিয়ে।