ভূমিকা সোমেন চন্দের লেখা অসাধারণ ছোট গল্প ‘ইঁদুর’ পড়ার পরই নিম্ন মধ্যবিত্তদের নিয়ে গল্প লেখার একটা সুতীব্র ইচ্ছা হয়। ‘নন্দিত নরকে’ , ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ও ‘মনসুবিজন’ নামে তিনটি আলাদা গল্প প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লিখে ফেলি। নিজের উপরে বিশ্বাসের অভাবের জন্যেই লেখাগুলি দীর্ঘদিন আড়ালে পড়ে থাকে। যাইহোক জনাব আহমদ ছফা ও বন্ধু রফিক কায়সারের আগ্রহে ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হয় মাস ছয়েক আগে। এবারে প্রকাশিত হল ‘শঙ্খনীল কারাগার’। ‘নন্দিত নরকে’র সঙ্গে এই গল্পের কোনো মিল নেই। দুটি গল্পই উত্তম পুরুষে বলা্ এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের গল্প এই মিলটুকু ছাড়া। নামধাম দুটি বইতেই প্রায় একই রেখেছি। প্রথমত নতুন নাম খুঁজে পাইনি বলে, দ্বিতীয়ত এই নামগুলির প্রতি আমি ভয়ানক দুর্বল বলে। কার্যকারণ ছাড়াই যেমন কারো কারো কিছু কিছু দুর্বলতা থাকে, এও সেরকম। আন্তরিক চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু ছাপার ভুল রয়ে গেছে। ভুলগুলি অন্যমনস্ক পা্ঠকের চোখ এড়িয়ে যাবে এইটুকুই যা ক্ষীণ আশা।
হুমায়ূন আহমেদ
কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ‘নন্দিত নরকের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ। এই উপন্যাসে নিম্নমধ্যবিত্ত এক পরিবারের যাপিত জীবনের আনন্দ-বেদনা, স্বপ্ন, মর্মান্তিক ট্রাজেডি মূর্ত হয়ে উঠেছে। নগরজীবনের পটভূমিতেই তাঁর অধিকাংশ উপন্যাস রচিত। তবে গ্রামীণ জীবনের চিত্রও গভীর মমতায় তুলে ধরেছেন এই কথাশিল্পী। এর উজ্জ্বল উদাহরণ অচিনপুর ফেরা মধ্যাহ্ন মুক্তিযুদ্ধ বারবার তাঁর লেখায় ফুঠে উঠেছে। এই কথার উজ্জ্বল স্বাক্ষর জোছনা ও জননীর গল্প ১৯৭১ আগুনের পরশমণি শ্যামল ছায়া নির্বাসন প্রভৃতি। উপন্যাস গৌরীপুর জংশন যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ চাঁদের আলােয় কয়েকজন যুবক'-এ জীবন ও চারপাশকে দেখার ভিন্ন দৃষ্টিকোণ মূর্ত হয়ে উঠেছে ‘বাদশা নামদার’ ও ‘মাতাল হাওয়ায় । অতীত ও নিকট-অতীতের রাজরাজড়া ও সাধারণ মানুষের গল্প ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে। গল্পকার হিসেবেও হুমায়ূন আহমেদ ভিন্ন দ্যুতিতে উদ্ভাসিত। ভ্রমণকাহিনি, রূপকথা, শিশুতােষ, কল্পবিজ্ঞান, আত্মজৈবনিক, কলামসহ সাহিত্যের বহু শাখায় তাঁর বিচরণ ও সিদ্ধি।
হুমায়ুন আহমেদের জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ এবং মৃত্যু ১৯ জুলাই ২০১২।