ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ মুহম্মদ জাফর ইকবালের অগ্রগামী চিন্তাগুলো স্থান পেয়েছে তাঁর অনন্যতম কলামগুলোতে। ভাষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, শিক্ষানীতি ও স্বদেশভাবনায় রয়েছে যথাযথ মূল্যায়ন ও মতামত। বিশেষ করে এই ক্ষেত্রগুলোতে তাঁর নিজস্ব চিন্তার ঐশ্বর্য খুঁজে পাওয়া যায়।
পাশাপাশি ডিজিটাল সংস্কৃতি আমাদের দেশে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃতির রূপরেখাটা কেমন হবে, বইমেলা আমাদের কীভাবে কতটা প্রভাবিত করছে এসব বিষয়গুলো নিয়ে যে ভাবনার অবকাশ আছে, সেগুলো আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন শৈল্পিকভঅবে যথেষ্ট প্রজ্ঞার মধ্য দিয়ে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুদ্ধাপরাধ। এই বিষয়ে বহু রাজনীতিবিদ অনেক ধরনের মত দিয়েছেন কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বহনকারী মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখেছেন বাঙালির বিচারে। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের যখন চিন্তার খরাকাল, ঠিক তখন এই লেখাগুলো শুকনো নদীতে পানির জোয়ার আনবে নিঃসন্দেহে।
ভাবনাটা এমনই- ভাষা, সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, বিজ্ঞান সবকিছুকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের যাত্রাটা হবে এখন প্রকৃত আমাদের দিকে।
ভূমিকা সারা বছর নানা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলো নিয়ে ‘স্বপ্নের দেশ এবং অন্যান্য’ বইটি বের হলো। প্রতি বছরই এই ধরনের একটি বই প্রকাশ করার জন্যে লেখাগুলো সংকলিত করার সময় আমি এক ধরনের সংকোচ অনুভব করি। ফরমায়েসী লেখাগুলোর কথা ছেড়ে দিয়ে দেখা যাবে অন্যান্য সব লেখাই দেশের কোনো না কোনো ঘটনার প্রতিক্রিয়া- বেশিরভাগ সময়েই ভয়ে ভয়ে থাকি যে কোনো একজন আমাকে জিজ্ঞেস করে বসবেন কেন আমি এই ‘মূল্যহীন’ লেখাগুলো বই হিসেবে প্রকাশ করি।
আমি মনে এই প্রশ্নটির একটা উত্তর দাঁড়া করে রেখেছি। প্রথম কারণ হচ্ছে এটি একটা নির্দিষ্ট সময়ের প্রতিচ্ছবির মতো কাজ করে। বিইয়ের লেখাগুলো তো বটেই, বইয়ের নামটিও সময়টা সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়। বোঝা যায় আমরা কী এই সময়টিতে দুঃস্বপ্নে ডুবে আছি না ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখছি। এই বইটিতে যেরকম যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে একাধিক লেখা রয়েছে, ঘড়ির কাঁটা আগে-পিছে নিয়া নিয়ে লেখা রয়েছে এবং অবশ্যই আমার প্রিয় বিষয় জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে লেখা আছে। আমার কাছে এই বিষয়গুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল এবং আমার ধারণঅ অনেকেই আমার সাথে একমত হবেন।
প্রতি বছর এ ধরনের একটি বই বের করার দ্বিতীয় একটা কারণ আছে এবং আমার ধারণা এটিই আসলে মূল কারণ। আমার কিছু কিছু পাঠক এই লেখাগুলোর জন্যে গভীর মমতা প্রকাশ করে থাকেন এবং তাদের সেই ভালোবাসার কথা মনে রেখেই প্রতি বছর এই ধরনের একটি বই প্রকাশ করে আসছি।
আমার সেই পাঠকদের জন্যে অনেক অনেক ভালোবাসা।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট
সূচিপত্র * ২০১০ হোক যুদ্ধাপরাধীর বিচারের বছর * মাতা মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমি * বইমেলার অন্য পিঠ * আবার ‘ডিজিটাল টাইম’? * ডিজিটাল নিষ্ঠুরতা * স্বাধীনতার মাস : মার্চ মাস * স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার * বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর আঁস্তাকুড়? * যারা এসএসসি দিয়েছে ......... * পাট জিনোমের স্বপ্নযাত্রা * ল্যাপটপে লেখাপড়া? * স্বপ্নের দেশটাকে দেখতে পাচ্ছি * কারিগরি শিক্ষা সবার জন্য * দুঃখটাকে ভাগাভাগি করি * আমাদের পুলিশবাহিনী * বিজয় দিবসের ভাবনা * জাতীয় শিক্ষানীতি, ধর্ম এবং হরতাল
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
মুহম্মদ জাফর ইকবাল জন্ম : ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২, সিলেট। বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং বেল কমিউনিকেশান্স রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ আঠার বছর পর দেশে ফিরে দীর্ঘদিন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক, পুত্র নাবিল এবং কন্যা ইয়েশিম।