নুহাশপল্লীতে শুটিং হলে হুমায়ূন ভাই মাঝে মাঝেই আমাদের সবাইকে ডাকতেন। আমরা সবাই তাঁর রুমে গিয়ে বসতাম। কেউ আগে ঢুকতো, কেউ পরে। এখনও আমি যখন তাঁর রুমে গিয়ে ঢুকি, ভাবি; আজ মনে হয় সবার আগে চলে এসেছি। এখনই হুমায়ূন ভাই আসবেন। সবার সাথে কথা বলবেন। নুহাশপল্লীতে হাঁটতে গেলে বার বার মনে হয়, এখনই বুঝি হুমায়ূন ভাইয়ের সাথে দেখা হবে। দেখবো তিনি পুকুরপারে হাঁটছেন। গাছের সাথে বিড়বিড় করছেন। আমাকে দেখে বুঝি ডাক দেবেন; ‛এই ফারুক, এদিকে আসো। দেখো এই গাছটা নতুন লাগিয়েছি। কেমন হয়েছে?' বাস্তবে তিনি আর আমাকে ডাকেন না। রুমে তাঁকে দেখি না। পুকুরপাড়ে হাঁটতে দেখা যায় না তাঁকে। রবীন্দ্রনাথের দু’টো লাইন তখন খুব মনে পড়ে-
'নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে,
রয়েছ নয়নে নয়নে।’
ফারুক আহমেদ
জন্ম: ২৫ মার্চ, মানিকগঞ্জ জেলার হাজীনগর গ্রামে। পরবর্তীতে বেড়ে ওঠা ঢাকায়। পিতা আফসার উদ্দিন এবং মাতা রাজিয়া খানমের দ্বিতীয় সন্তান তিনি। মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ভূগলে স্নাতক ও স্নাতোকত্তর ডিগ্রি লাভ করেন জাহাঙ্গী- রনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় থেকেই তিনি মঞ্চ নাটকে যোগ দেন। পরবর্তীতে ঢাকা থিয়েটারের কর্ণধার এবং বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর নির্দেশনায় মঞ্চ নাটকে অভিনয় শুরু করেন। তার অভিনীত উল্লেখ্যযোগ্য মঞ্চ নাটকের মধ্যে রয়েছে সংবাদ কার্টুন, কীৰ্ত্তনখোলা, কেরামত মণ্ডল, চক্র, যৈবতী কন্যার মন ইত্যাদি।১৯৯৩ সালে তিনি হুমায়ূন আহমেদের সান্নিধ্যে আসেন এবং দীর্ঘ প্রায় বিশ বছর হুমায়ূন আহমেদের বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করেন।তার অভিনীত হুমায়ূন আহমেদের উল্লেখ্যযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে বৃক্ষমানব, পক্ষীরাজ, অচীনবৃক্ষ, তারা তিনজন, তুরুপের তাস, অদেখা ভূবন এবং টিভি সিরিয়ালের মধ্যে রয়েছে উড়ে যায় বকপক্ষী, আজ রবিবার ইত্যাদি। হুমায়ূন আহমেদ তার 'লিলুয়া বাতাস' উপন্যাসটি ফারুক আহমেদকে উৎসর্গ করেছেন।