সঞ্চয়িতার কবিতাগুলি সংকলনের ভার আমি নিজে নিয়েছি। অন্যের উপরেই দিতাম।কেনন,কবিতা যে লেখে কবিতাগুলির অন্তরের ইতিহাস তার কাছে সুম্পষ্ট। বাহিরের প্রকাশে কবিতাগুলি উজ্জ্বল হয়েছে কি না হয়তো সেটা তার পক্ষে নিশ্চিত বোঝা কোনো স্থলে সহজ হয় না।কিন্তু, এই সংকলন উপলক্ষে একটি কথা বলার সুযোগ পাব প্রত্যাশা করে এ কাজে হাত দিয়েছি।যাঁরা আমার কবিতা প্রকাশ করেন অনেক দিন থেকে তাঁদের সম্বন্ধে এই অনুভব করছি যে, আমার অল্প বয়সের যে-সকল রচনা স্থলিত পদে চলতে আরম্ভ করেছে মাত্র, যারা ঠিক কবিতার সীমার মধ্যে এসে পৌছয় নি, আমার গ্রন্থাবলীতে তাদের স্থান দেওয়া আমার প্রতি অবিচার।মনে আছে কোনো এক প্রবন্ধে আমার গানের সমালোচনায় এমন সকল গানকে আমার কবিত্বের শত্রুতর দৃষ্টান্ত-স্বরূপে লেখক উদ্ধৃত করেছিলেন, যেগুলি ছাপার বইয়ে প্রশ্রয় পেয়ে আমাকে অনেক দিন থেকে লজ্জা দিয়ে এসেছে। সেগুলি অপরিণত মনের প্রকাশ অপরিণত ভাষায়। কেউ কেউ সেগুলিকে ভালোও বাসেন, সেই দুর্গতির জন্যে আমি দায়ী। প্রবন্ধলেখককে দোষ দিতে পারি নে, কেননা লেখায় যে অপরাধ করেছি ছাপার অক্ষরে তাকে সমর্থন করা হয়েছে। যে কবিতাগুলিকে আমি নিজে স্বীকার করি তার দ্বারা আমাকে দায়ী করলে আমার কোনো নালিশ থাকে না। বন্ধুরা বলেন, ইতিহাসের ধারা রক্ষা করা চাই আমি বলি, লেখা যখন কবিতা হয়ে উঠেছে তখন থেকেই তার ইতিহাস। এ নিয়ে অনেক তর্ক হতে পারে সে কথা বলবার স্থান এ নয়্।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (জন্ম : ৭ মে, ১৮৬১ - ৭ই আগস্ট, ১৯৪১) (মৃত্যু : ২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ - ২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)। তিনি ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছােটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস, ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তাঁর সর্বমােট ৯৫টি ছােটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সঙ্কলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খন্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খন্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নােবেল পুরস্কার পান।