তিন নম্বর চোখ এর ভূমিকা: তরুণ বয়সে থিয়েটারের শখ ছিল, যেমন অনেকের থাকে। নাটক লেখার স্পর্ধা হয়নি কখনও। গতবছর ফেব্রুয়ারি মাসে বিখ্যাত অভিনেতা-পরিচালক দুলাল লাহিড়ি আমেরিকায় নাটক করার আমন্ত্রণ পান। ছয়-সাতটি চরিত্র, একটি সেট, এই হল শর্ত। বাধেহয় মনের মত নাটক না পেয়ে দুলাল আমাকে অনুরোধ করেন নাটকটি লিখে দিতে। আমি প্রথমে রাক্তি হইনি নিজের অক্ষমতা জানা থাকায়। কিন্তু নাছোড়বান্দা দুলালকে শেষ পর্যন্ত এড়াতে পারিনি। কয়েকবার যাওয়া আসায় প্রবাসী বাঙালিদের খানিকটা জানতাম। তঁরা ডলার দিয়ে টিকিট কিনে সিরিয়াস বিষয় নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে লঘুরসের নাটকই পছন্দ করেন। নাটক দেখতে আসা তঁদের কাছে বিনোদনই। ‘তিন নম্বর চোখ’-এ হাসির আবরণে যে নিখুঁত সত্যিটা বলার চেষ্টা করেছি তা তাদের খারাপ লাগেনি। ওদেশে মোট পনেরটি রজনীর দর্শকদের স্বতস্ফুর্ত উৎসাহ সেটাই প্রমাণ করে। তাই বলে রাখা ভাল, এই নাটক নেহাতই দুঘন্টার বিনোদন, তার বেশি কিছু নয়।
সমরেশ মজুমদার
জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদারের জন্ম ১০ মার্চ ১৯৪৪।
তাঁর শৈশব এবং কৈশাের কেটেছে জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সের চা বাগানে। লেখাপড়ায় মন বসতাে না একদমই। ইচ্ছে ছিল নায়ক হবেন। তাই জলপাইগুড়ির বন্ধুদের নিয়ে সাজাতেন নাটকের দল। বাজারের জন্য দিদিমার দেয়া টাকা বাঁচিয়ে তাও খরচ করতেন বন্ধুদের নিয়ে। ষােলাে বছরের এক তরুণ সমরেশ কলকাতায় আসেন ১৯৬০ সালে। ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজে, বাংলায়। এখানেও শুরু হলাে থিয়েটার আর নাটক লেখা, গল্প লেখার কাজ। নাটক লিখলেও নাটক হতাে না। অভিনয়ও জমছে না ঠিকমতাে। ততদিনে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাসের সার্টিফিকেট জুটলাে কপালে। কিন্তু নায়ক হওয়ার স্বপ্ন আর পূরণ হলাে না। এবার নাটক বাদ। গল্প লেখায় সময় ব্যয়। ১৯৭৬ সালে দেশ পত্রিকায় ছাপা হলাে তাঁর প্রথম উপন্যাস দৌড়। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। প্রকাশিত গ্রন্থ ২১৫।
সমরেশ মজুমদার ১৯৮২ সালে পান ‘আনন্দ পুরস্কার'। কালবেলা উপন্যাসের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান ১৯৮৪ সালে।