ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ তাঁর জীবদ্দশায় লোকে বলত, রুশ সাম্রজ্যে জার্ বা সম্রাট তো দু-জন: একজন যিনি উত্তরাধিকার সূত্রে সিংহাসন পেয়েছেন, আর অন্যজন হলেন লিয়েফ্ নিকলায়েভিচ্ তল্স্তোয়।প্রথম জন তো নড়বড় করছে, কখন যে হুড়মুড় করে পড়ে যাবে “! আর দ্বিতীয় জনের কলমের হুঙ্কার ও গর্জেনে সম্রাট্রের আসন সারাক্ষণ কাঁপছে। বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে তল্স্তোয় নানা কারণে অপ্রতিদ্বন্ধী। প্রথমেই যা চোখ এড়ায় না, তা হল ছোট মাপের কোনোকিছু তিনি লিখতে পারতেন না। তাঁর ছোটগল্প মানেও তো কমপক্ষে তিরিশ/চল্লিশ পৃষ্ঠার ব্যাপর, তা কমে নয়। মানসিক ও দৈহিক বল দুটোই ছিল প্রায় দানবীয়। অভিজাত বংশে ধনাঢে পরিবারে জন্ম, নিজেই বলেছেন যে হেন কুকর্ম নেই যা তিনি করেন নি; অথচ পরে এই মানুষটিই স্বেচ্ছায়-দারিদ্র্য বেছে নিয়েছেন। কৈশোরোত্তর কাল থেকে আমৃত্যু তাঁর ভিতরে সন্ত ও শয়তানের লড়াই চলছে; কখনও সন্ত জয়ী , কখনও বা শয়তান।
অথচ এমন বর্ণিল জীবনের কোনো প্রামাণ্য আলেখ্য, স্বল্প পরিসরে বা বৃহৎ আয়তনে ,বাংলা ভাষায় তেমন লিখিত হয়নি। সে বিবেচনায় হায়াৎ মামুতদের এই বই পথিকৃৎ রূপে গণ্য হওয়ার যোগ্য, এবং হচ্ছেও তাই।
সূচিপত্র * নিবেদন * জীবনী * পরিশিষ্ট * বাংলা অনুবাদে তল্স্তোয় * বাংলায় তল্স্তোয় বিষয়ক রচনা * নির্ঘণ্ট
হায়াত মামুদ
হায়াৎ মামুদের জন্ম ব্রিটিশ ভারতে, পশ্চিমবঙ্গের। হুগলি জেলার মৌড়া নামে অখ্যাত এক গ্রামে। ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের ১৭ই আষাঢ় (২রা জুলাই ১৯৩৯) তারিখে। ১৯৫০ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অভিঘাতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত পিতার হাত ধরে চলে আসতে হয় ঢাকা শহরে । অদ্যাবধি সেখানেই বসবাস। স্কুল-কলেজবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেছেন এ শহরেই। পিএইচ. ডি. ডিগ্রি তুলনামূলক সাহিত্যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, প্রায় প্রৌঢ় বয়সে। রুশ ভাষা অল্পবিস্তর জানেন, অনুবাদের চাকরি করেছেন প্রগতি প্রকাশনে, মস্কোয় সুদূর ও স্বপ্নিল সােভিয়েত ইউনিয়নে বসে। দেশের অভ্যন্তরে চাকরি সর্বদাই শিক্ষকতার প্রথম কলেজে, পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে অবসর-জীবন যাপন করছেন। বাংলা একাডেমী পুরস্কার পেয়েছেন। শিশুসাহিত্যে দেশ-বিদেশের সারস্বত সমাজের সঙ্গে যােগাযােগ আছে। সৃজনশীল রচনা, অনুবাদ, গবেষণা, শিশুসাহিত্য, জীবনীগ্রন্থ, সাহিত্য-সমালােচনা, ছাত্রপাঠ্য বই ইত্যাদি মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ষাটের কাছাকাছি।