সেলিনা হোসেন রচিত একাত্তরের ঢাকা একটি সংকলন গ্রন্থ। শুরু হয়েছে ১৯৭১ সালের ১ লা মার্চ থেকে। শেষ হয়েছে বিজয় দিবসের পরে বধ্যভূমি আবিষ্কার এবং লেখকের নানা স্মৃতিচারণের মাধ্যমে। একাত্তরের নয় মাসে কত কি ঘটেছে তার নানা ধরণের বিবরণ আছে এ বইয়ে। ২২টি শিরোনামে তিনি বিভিন্ন বিষয় এনেছেন। তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য যেমন: মার্চের পচিশ দিন: পাকিস্তান সরকার বনাম বঙ্গবন্ধু সরকার। প্রতিরোধ, আগুন ও ফুলকি। গেরিলা অপারেশন। শান্তি কমিটি রাকাকার আল-বদর আল শামস। ১৬ ডিসেম্বর, আত্মসমর্পণ ও বিজয়। ইত্যাদি। সে এক অবিস্মরণীয় সময় ছিল বাংলাদেশের মানুষের জীবনে। গণমানুষ স্বাধীনতার লক্ষ্যকে জীবনের বিনিময়ে বরণ করেছিল। তার জন্য ত্যাগ স্বীকারে কোনো কুণ্ঠা ছিল না। সেজন্যই কিছু সংখ্যক রাজাকার আলবদরের বিরোধিতা মানুষ ভাসিয়ে দিয়েছে রক্তের স্রোতে। সেই অবিস্মরনীয় সময়কে বৃথা যেতে দেয়নি বাংলার মানুষ। স্বাধীনতা অর্জন এমনই সেখানে কারো অবদান খাটো করে দেখবার নয়। স্বাধীনতার জন্য দেশের প্রতিটি মানুষই যোদ্ধা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে এ ঋণ। এ বইয়ে সে সময়ের ঢাকার কথা তুলে এনেছেন লেখক। সে অর্থে এ বই সময়ের চিত্র। ইতিহাসের উপাদান।
সেলিনা হোসেন
সেলিনা হােসেনের জন্ম ১৪ জুন ১৯৪৭, রাজশাহী শহরে। ষাটের দশকের মধ্যভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে লেখালেখির সূচনা। প্রথম গল্পগ্রন্থ উৎস থেকে নিরন্তর প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। রাজশাহীতে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বিভাগীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযােগিতায় চ্যাম্পিয়নশিপ স্বর্ণপদক পান। ড. মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক (১৯৬৯); বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮০); আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১); অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪); শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৬ ও ১৯৯৭); দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্যে রামকৃষ্ণ জয়দয়াল হারমােনি অ্যাওয়ার্ডস’, দিল্লি (২০০৬); জাতীয় পুরস্কার একুশে পদক (২০০৯); দিল্লির ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট থেকে রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (২০১০); ঢাকা লেডিস ক্লাব কর্তৃক লায়লা সামাদ স্বর্ণপদক (২০১১); রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা থেকে ডিলিট উপাধি (Honoris Causa) ২০১০; গায়ত্রী সন্ধ্যা’ উপন্যাসের জন্য আইআইপিএম, দিল্লি কর্তৃক রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার ২০১০। দিল্লির সাহিত্য আকাদেমী থেকে প্রেমচাঁদ ফেলােশিপ লাভ ২০০৯। নীল ময়ূরের যৌবন’ ও ‘যাপিত জীবন’ উপন্যাস রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড উপন্যাস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ পত্রে পাঠ্য প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতায় গল্প পাঠ্য। গায়ত্রী সন্ধ্যা’, ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ৩টি উপন্যাস নিয়ে এমফিল থিসিস সম্পন্ন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যের ওকটন কমিউনিটি কলেজে ২০০৬ সালে দুই সেমিস্টারের পাঠ্য ছিল ‘হাঙর নদী গ্রেনেড' উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন ও জেন্ডার স্টাডিস ডিপার্টমেন্টে কালকেতু ও ফুল্লরা' উপন্যাস পাঠ্য। ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি, কন্নড়, রুশ, মালে, ফরাসি, জাপানি, উর্দু, মালয়েলাম, কোরিয়ান, ফিনিস, আরবি প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর গল্প এবং উপন্যাস। ইংরেজিতে অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা দশটি।