বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস আলালের ঘরের দুলাল। ১৮৫৪ সালে এটি মাসিক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়। ১৮৫৮ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। অনেক সাহিত্য সমালোচক একে ‘বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সামাজিক নকশা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। গ্রন্থটি সম্পূর্ণ সামাজিক পটভ‚মিকায় রচিত। সে সময়ের কলকাতার নব্যশিক্ষিত ইয়ংবেঙ্গলদের বিপথগামী হওয়া এবং তার পরিণতি এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। এতে সে সময়ের সমাজব্যবস্থার নানা অসঙ্গতি, যেমন- সামাজিক বিশৃঙ্খলা, পাশ্চাত্য শিক্ষার অন্ধ অনুকরণ, বিশেষ করে নব্যশিক্ষিতদের নৈতিক অধঃপতন ইত্যাদি সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
উপন্যাসে দেখা যায়, বাবুরামবাবু তার অতি আদরের পুত্র মতিলালকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে উদাসীন ছিল। অধিকন্তু মতিলাল নানা কুসঙ্গে পড়ে অধঃপতনের শেষ ধাপে চলে যায়। অপরদিকে তার অনুজ রামলাল বড়ো হয় বরদাবাবুর সংস্পর্শে থেকে। নীতিবান বরদাবাবুর নিকট থেকে সে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা পায়।
উপন্যাসের কাহিনি নির্মাণে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও সমাজের খণ্ডচিত্রগুলো নিপুণ দক্ষতার সঙ্গে অঙ্কিত হয়েছে। এ ছাড়া সে সময়ের সংস্কৃত ও ইংরেজিঘেঁষা রচনারীতির ধারা থেকে বের হয়ে এসে প্রথম চলিত রীতিতে সাহিত্য রচনা প্রশংসার দাবি রাখে। পরবর্তীতে বঙ্কিমচন্দ্রের হাত ধরে যে উপন্যাসের স্বাদ পাঠক পেয়েছে তার পেছনে আলালের ঘরের দুলাল-এর অবদান অনস্বীকার্য। আর এখানেই প্যারীচাঁদ মিত্রের সার্থকতা।