ক্রোমিয়াম দেয়ালে হেলান দিয়ে আমি স্থির চোখে সামনে তাকিয়েছিলাম। যতদূর চোখ যায় ততদূর এক বিশাল বিস্তৃত ধ্বংসস্তূপ নিথর হয়ে পড়ে আছে। প্রাণহীন শুষ্ক নিষ্করুণ ভয়ঙ্কর একটি ধ্বংসস্তুপ। শুধুমাত্র মানুষই একটি সভ্যতাকে এত যত্ন করে গড়ে তুলে তাকে আবার এত নিখুঁতভাবে ধ্বংস করতে পারে। শুধুমাত্র মানুষ।
বেলা ডুবে গেলে আমি ধসে যাওয়া ভাঙ্গা কংক্রিটের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে ক্রোমিয়ামের এই দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকি। পৃথিবীর বাতাস পুরোপুরি দূষিত হয়ে গেছে, অসংখ্য ধূলিকণায় সারা আকাশে একটি ঘোলাটে রং, সূর্য ডুবে যাবার আগে সূর্যালোকে বিচ্ছুরিত হয়ে হঠাৎ কিছুক্ষণের জন্যে আকাশে বিচিত্র একটি রং খেলা করতে থাকে। সেই অপার্থিব আলোকে সামনের আদিগন্ত বিস্তৃত ভয়াবহ এই ধ্বংসস্তুপকে কেমন যেন রহস্যময় দেখায়। দীর্ঘ সময় একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলে হঠাৎ এই প্রাণহীন ধ্বংসস্তূপকে একটি জীবন্ত প্রাণীর মতো মনে হতে থাকে। মনে হয় এক্ষণি যেন সেটি গা। ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াবে। আমি এক ধরনের অসুস্থ কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে থাকি, কিছুতেই চোখ ফেরাতে পারি না।
সূর্য ডুবে যাবার পর হঠাৎ করে চারদিক অন্ধকার হয়ে যায়। তখন আর এখানে থাকা নিরাপদ নয়। পারমাণবিক বিস্ফোরণে পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণী ধ্বংস হয়ে গেছে, বেঁচে আছে কিছু বিষাক্ত বৃশ্চিক এবং কুৎসিত সরীসৃপ। রাতের অন্ধকারে তারা জঞ্জালের ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করে । আমি নেমে যাবার জন্যে উঠে দাঁড়ালাম ঠিক তখন নিচে থেকে রাইনুক নিচু স্বরে ডাকল, কুশান, তুমি কি ওপরে?
এটি আমাদের বসতির নির্জন অংশটুকু, এখানে আশপাশে কেউ নেই, নিচু গলায় কথা বলার কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু তবুও সবাই নিচু গলায় কথা বলে। সবার ভেতরে সব সময় কেমন এক ধরনের অস্পষ্ট আতঙ্ক, কারণটি কে
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
মুহম্মদ জাফর ইকবাল জন্ম : ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২, সিলেট। বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং বেল কমিউনিকেশান্স রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ আঠার বছর পর দেশে ফিরে দীর্ঘদিন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক, পুত্র নাবিল এবং কন্যা ইয়েশিম।