‘হরিণনিদ্রার নাচ’ এই নামেই আভাস দিচ্ছে গ্রন্থের পরিচয়। কবি হোসেন দেলওয়ার কবিতা লেখেন বহুদিন হলো। অবিরাম নয়, বিরতিসহ― প্রকাশবাসনা থেকে দূরে বসে প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাশূন্য অবসরে। এ তার প্রথম বই। দীর্ঘ সময়ের এক নৈঃশব্দেরই বুনুন যেন। কোলাহল, বিবৃতি, চমক ও চিৎকার অবিচলিতভাবে উপেক্ষার শক্তিতে উজ্জ্বল-এর পঙক্তিগুলো।
কবিতায় নিসর্গের এক ছায়াজল বিস্তার করেন তিনি। কিন্তু সেটা আলেখ্যমাত্র― ভঙ্গিল রেখায় রচিত। মূল লক্ষ্য সংবেদনের গভীর, স্পর্শাতীত এক জগতের চির নশ্বর ও ম্লান ভাস্বরতা। যেখানে বনময়ূরের ডাকে মেঘ জমা হয়, মৃত ঢেউয়ের সুরভী নিয়ে উড়ে আসে শীতপাখি, হৃৎটিলা বাতাসে ভাসে। যেন পায়রা উড়াল অবশেসনের রাতে লেখা হয়েছে এই কবিতাগুলি।
গ্রহণের কালে ভুল করে ডানা ঝারে যেই পাখি, তারই ছায়া এসে পড়ে পাঠকেরও চোখে। তবু, শুধু মুগ্ধবোধ চেয়ে থাকাই শেষ কথা নয়। পাঠের নীরব ভ্রমণে সংশয় জেগে উঠতে থাকে ধীরে ধীরে। যুগপৎ উন্মোচিত হয় রক্তবেণী ও মালঞ্চের সিঁড়ি। প্রশ্ন জাগে কাদের ভঙ্গুর স্বপ্নগুলো তবে পুষ্প হয় ফোটে? তখনই আমরা আবিষ্কার করি : সেমেট্রি জুড়ে ফুটে আছে শত জবাতারা, শহীদের রক্তে লাল আলপনা।
মনে হয়, স্নিগ্ধ শান্ত বনের গভীরে কোথাও হুংকার প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে। তাই কি সান্দ্রটিলা ছেড়ে ঘুমের ভেতর আতঙ্কে ছুটে চলেছে হরিণ!