নেরুদাসমুদ্রে জেগে ওঠে লবণদ্রোহ,
তাঁর কবিতার নোনাজলে ভাসে পিনোশের প্রভুভক্ত ভূত;
লোরকার গিটার থেকে ঝরে পড়ে আন্দালুসিয়ার রক্তিমাভ সন্ধ্যা, ফ্যাসিবাদের গলায় ফাঁস হয়ে ঝুলে চন্দ্রবর্ণের অসমাপ্ত গজল।
আখমাতোভার লেলিনগ্রাদে জমে থাকে অভিযোগের বল্লম, অনাহারের ছায়া—
সে ছায়ায় লেখা হয় স্তালিনের বিরুদ্ধবাক্য—
এতে ছিলনা বেদনা, ছিল শুকিয়ে যাওয়া রক্তদাগ।
মায়াকোভস্কির শব্দভাণ্ডার ভেঙে পড়ে ক্রেমলিনের পূব দেয়াল রেডস্কয়ারে— বিপরীতে কবির আত্মহত্যায় জ্বলে ওঠে রাষ্ট্রদ্রোহের আনাড়ি মোমবাতি।
দূরের বাগানে নাজিম হিকমতের কলমে জন্ম নেয় লাল গোলাপ, তুরস্কের চন্দ্রমুখী জেলখানায় জেগে ওঠে কাব্যের অস্ত্রভাণ্ডার;
ম্যান্ডেলস্টামের মুখে আটকে যায় রক্তহিম শীতল বাতাস,
যে বাতাসে মিশে থাকে গুলাগের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের গন্ধ।
ব্রেখটের দূরত্বের ক্রিয়া নাট্যকাব্যে হাঁসফাঁস করে
ফ্যাসিবাদী কাকের দল,
এপোলিনেয়ারের ক্যালিগ্রামে লুকিয়ে থাকে
বিশ্বযুদ্ধের গুপ্তচর;
গার্সিয়া লোরকার রক্তে স্নান করে জাগে
ফ্ল্যামেনকো-বিদ্রোহ, অসংখ্য তরুণ।
আর মাহমুদ দারবিশের জবানে ফিলিস্তিন হয়ে ওঠে
এক জীবন্ত মানচিত্র।
সিলভিয়া প্লাথের হৃদয়চুল্লিতে পোড়ে যৌনতার কিংবদন্তী গদ্য, তাঁর আত্মহত্যা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিষাদময় অস্ত্র;
অডেনের কবিতায় ধ্বনিত হয় স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের রাশি রাশি বুলেট,
আর ফ্যাননের শব্দভাণ্ডার উড়ে যায় আলজেরিয়ার মুক্তিবাহিনীর পতাকায়।
ল্যাংস্টন হিউজের জ্যাজ কবিতায় কাঁপে হারলেমের নিরস্ত্র রাত, রিদম এ্যান্ড ব্লুজের সুরে মিশে যায় কালো মানুষের রক্তাক্ত ইতিহাস;
এমিলি ডিকিনসনের বর্ণিল ড্যাশগুলো হয়ে ওঠে নারীর মৌনতার ধারালো ছুরি,
আর বোর্হেস, বোর্হেসের— অন্ধত্বে দেখা যায় স্বৈরাচারের অদৃশ্য জগৎ।
আশরাফ জুয়েল
Overall Ratings (0)