“ছেলেবেলায় শেখা একটা সুর বাজাতে যাব, এমন সময় ফোনটা কেঁপে ওঠে। ছেলের ফোন। নিশ্চয়ই তার ঘুমের সময় হয়েছে। বাবার মুখ না দেখে সে ঘুমোতে যায় না ভিডিও কলে। গত দুই বছর ধরে এভাবেই শুধু কথা বলার অনুমতি আমার।
- বাবা, তুমি সাবধানে আছো তো?
- আর কত সাবধান হব? তোকে ফেলে পালিয়ে এসেছি, এখন আবার ফ্ল্যাটের খাঁচায় বন্দি। যেন বেঁচে থাকাটাই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
- বেঁচে থাকাটা কি জরুরি না?
- জরুরি বইকি। কিন্তু শুধু বেঁচে থাকাটাই তো যথেষ্ট না রে বাবা!”
*
ফুলকুমারী মানে কী?
বইটার শুরু প্যারিসে কোভিডের লক ডাউন যেদিন শুরু হয়, সেদিন থেকে। লেখক তার অ্যাপার্টমেন্টে ফিরছেন। অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে পড়ে একটা ইদুর। ইদুরটা লেখকের পোষ মেনে যায়। তিনি নাম দেন ফুলকুমারী।
ফুলকুমারীকে লেখক গল্প বলতেন প্রত্যেকদিন; একটা করে অ্যারাবিয়ান নাইটসের মতো। জীবনের গল্প। সেই বগুড়ার শৈশব, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র্য, মুজিবের শাসন, মেডিক্যাল কলেজ জীবন, ছাত্র রাজনীতি, এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, স্বল্পকালীন ডাক্তারী জীবন, অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট অ্যাক্টিভিজম, হাসিনার শাসন, আকরামের ক্রস ফায়ার, রিফিউজি হওয়া, প্যারিসের রিফিউজি জীবনের কষ্ট-বঞ্চনা-অপমান, আর তার সাথে সাথে গল্পের মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের ইতিহাসের ন্যারেটিভ। গড়ে ওঠে এক নির্বাসিত বাংলাদেশির বিশ্বভাবনা। পদে পদে দেখিয়ে দেওয়া হয় এই দারিদ্র্যক্লিষ্ট বাংলাদেশের দুনিয়াকে দেওয়ার আছে অনেককিছু। পৃথিবী এই বাংলাদেশের কাছে হাত পাততে পারে তার সমস্যা মোকাবেলায়।
পিনাকী ভট্টাচার্য
'৯০-এর ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাঠ থেকে উঠে আসা যে কয়জন রাজনৈতিক কর্মী সমসাময়িক বাংলাদেশে আলােচিত লেখক হয়েছেন, পিনাকী ভট্টাচার্য তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সােভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে দিশা খুঁজে ফেরা পিনাকীর রয়েছে বিচিত্র সব রাজনৈতিক চিন্তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার অভিজ্ঞতা। লেখালেখির বিষয় বহুবর্ণ ও বিচিত্র। দর্শন, ইতিহাস আর রাজনীতি পিনাকীর লেখালেখির প্রিয় বিষয়। সফল কর্পোরেট চিফ এক্সিকিউটিভ থেকে এখন লেখালেখি ছাড়াও নিজের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাজে সময় দেন। একাদেমিয়া নামের একটি নিয়মিত পাঠচক্রের সভাপতি। বাংলাদেশের ফেইসবুকের লেখালেখির জগতে পিনাকী ভট্টাচার্য ইতিমধ্যেই নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। প্রশ্ন তুলতে ভালােবাসেন তিনি। নানা বিষয়ে বিস্ফোরক প্রশ্ন তুলে অনেক প্রচলিত বয়ানকে নড়বড়ে করে দেয়ার মতাে বিস্ময়কর দক্ষতা আছে পিনাকীর।