সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, স্বস্তি ও শান্তি প্রত্যেক মানুষের বরং প্রত্যেক প্রাণীর অভীষ্ট ও ঈপ্সিত জিনিস। ‘যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ’ যতদিন বাঁচবে সুখে বাঁচ – প্রতিটি প্রাণীর ধর্ম। সকল মানুষ চায় তার জীবন সুখের হোক। এর জন্য সে মেহনত করে। কষ্ট স্বীকার করে সুখের সামগ্রী সংগ্রহ করার জন্য। সন্ধান করে শান্তির আধার। রচনা করে সুখের নীড়। কিন্তু সকল মানুষ কি সুখ পায়? অবশ্যই না।
মুমিন ঈমানের মাঝে সুখ চায়। কাফের কুফরীর মাঝে সুখের ¯্বাদ গ্রহণ করে। মাতাল মদের মাঝে শান্তি কামনা করে। চোর চুরির মাঝে সুখের আশা করে। ব্যভিচারী ব্যভিচারের মাঝে সুখ লুটতে চায়। অর্থোপার্জনকারী অর্থের মাঝে সুখের সন্ধান আছে মনে করে। নেতা তার নেতৃত্বে সুখের খোঁজ করে। ভ্রমণকারী ভ্রমণের মাঝে সুখের আমেজ আ¯্বাদ করে। কিন্তু সত্যিই কি তারা সুখের অধিকারী হতে পারে?
অধিকাংশ মানুষই সুখী নয়। বেশীর ভাগ মানুষের সুখের স্বপ্ন বাস্তব ও সফল নয়। শান্তির আশা পূর্ণ নয়।
আসলে সুখ তো কোন একটি জিনিসের নাম নয়। সুখের উৎস, কারণ, অবস্থা, কাল ও পাত্র এক নয়। তাই কোন মানুষ এক বিষয়ে সুখী হলেও অন্য আরো কয়েকটি বিষয়ে সে দুঃখী। আর তার মানেই হল সে পরিপূর্ণ সুখী নয়। পরিপূর্ণ সুখী মানুষ দুনিয়াতে আছে কিনা তা অবশ্য বলা মুশকিল।
বাইরে থেকে অনেক মানুষকে দেখে সুখী মনে করা হয়। যাদের সুখের বাগান ফুলে-ফলে সুশোভিত দেখে অনেক মানুষ তাদের মত সুখ কামনা করে অথবা তাদের প্রতি হিংসা করে। কিন্তু তারা কি সত্যপক্ষেই সুখী? যাদেরকে সুখের তারকা মনে করা হয়, তারা কি আসলেই সুখ আকাশের সু-উজ্জক্ষল তারকা, নাকি তাদেরও পশ্চাতে রয়েছে দুঃখের কালো অন্ধকার? তারা এমন মানুষ নয় তো, যাদের ব্যাপারে এক উর্দূ কবি বলেন,
আসলে সুখ হল হৃদয়ের সেই স্বাচ্ছন্দ্য-শান্তি, স্বস্তি ও আনন্দ অনুভবের নাম, যা দৈহিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক কল্যাণ বর্তমান ও ভবিষ্যতে সুনিশ্চিত বলে অনুভূত হয়।
বলা বাহুল্য, মানুষ এ জগতে সুখ অনুভব করে:
১. পূর্ণ ঈমান নিয়ে।
২. জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বিবেক-বুদ্ধি নিয়ে।
৩. মান, খ্যাতি, যশ ও গৌরব নিয়ে।
৪. নিরোগ দেহ ও সুস্বাস্থ্য নিয়ে।
৫. ধন ও ঐশ্বর্য এবং হালাল রুযী নিয়ে।
৬. প্রশস্ত বাড়ি ও বিল্ডিং নিয়ে।
৭. পতিব্রতা নারী (স্ত্রী) নিয়ে।
৮. ভালো গাড়ি নিয়ে।
৯. দাস-দাসী নিয়ে।
১০. নেক প্রতিবেশী নিয়ে।
১১. বিশ্বস্ত বন্ধু নিয়ে।
১২. (হিংস্র মানব-দানব ও জন্তু এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে) নিরাপদ পরিবেশ নিয়ে।
১৩. বসন্তের মত যৌবন নিয়ে।
সুখের মূল বিষয় হল, নিরাপত্তা; যেহেতু ভীত-সন্ত্রস্ত ব্যক্তি সুখী হতে পারে না। অতঃপর সুস্থতা; যেহেতু অসুস্থ ও রোগী ব্যক্তি সুখী হতে পারে না। অতঃপর যৌবন; যেহেতু যৌবনহীন ব্যক্তি সুখী হতে পারে না। অতঃপর ধনবত্তা; যেহেতু দরিদ্র ও অভাবী ব্যক্তি সুখী হতে পারে না।