ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গোকর্ণঘাটে মালো পরিবারে জন্মেছিলেন অদ্বৈত মল্লবর্মণ। ভদ্রলোকেরা ‘গাবরপাড়া’ বলে তাচ্ছিল্য করতেন। শৈশবেই মা-বাবাকে হারিয়ে অকূলপাথারে পড়েন। প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে আইএ ক্লাসে ভর্তি হলেও আর্থিক সংকটে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় পাড়ি দেন। ত্রিপুরা পত্রিকায় সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি; ক্রমশ নবশক্তি, মোহাম্মদী, কৃষক ও সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় কাজ করেন। আচমকা যক্ষ্মারোগ ধরা পড়লে কাঁচড়াপাড়া যক্ষ্মা হাসপাতালে ভর্তি হয়েও তিনি পালিয়ে যান; লেখার কাজ ও মালো সম্প্রদায়ের মানুষের টানে। অকৃতদার মানুষটির ৩৭ বছরের জীবনের আদ্যোপান্ত সংগ্রামে ভরা। গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে তিনি অসামান্য প্রতিভা, তবু রহস্যময় কারণে জীবদ্দশায় ভারতের চিঠি—পার্ল বাক্কে ছাড়া কোনো গ্রন্থই প্রকাশ করেননি। কেমন ছিল তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের লড়াই আর মানসরাজ্য? সময়ের জলছাপে তাঁর নামটি মুছে গেলেও তিতাস একটি নদীর নাম স্বমহিমায় ভাস্বর। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহই ছিল জীবনের আরাধনা, সেই অনগ্রসর জনপদ থেকে বেরিয়ে কালের ধুলোয় মিশে যেতে যেতেও নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধিই নয়, বাংলা সাহিত্যের পাদপ্রদীপের আলোয় কীভাবে তিনি স্বতন্ত্র ও বিশিষ্টরূপে ধরা পড়লেন? তিতাসের বুনো হাঁস উপন্যাসে মন কেমন করা সেই গল্পই ধরা পড়েছে।
মাসউদ আহমাদ
মাসউদ আহমাদ
জন্ম ৫ জুন ১৯৮৫, রাজশাহীর পুঠিয়ায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। ছোটগল্পই লেখার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন নামী পত্রিকায় গল্প প্রকাশিত হয়েছে। কলকাতার দেশ পত্রিকায় ১৭ জানুয়ারি ২০২২ থেকে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর দীর্ঘ উপন্যাস কাঞ্চনফুলের কবি। তিনি বাংলাদেশের প্রথম লেখক, যাঁর উপন্যাস দেশ-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। ছোটগল্পের জন্য পেয়েছেন আইএফআইসি ব্যাংক নিবেদিত কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০২২। দীর্ঘদিন সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; সর্বশেষ কর্মস্থল দৈনিক কালের কণ্ঠ-এর সম্পাদকীয় বিভাগ। বর্তমানে শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।