ঝুমলাল হরিজন সমপ্রদায়ে জন্মগ্রহণ করেছে। জন্মের পর সে বাবাকে হাট ঝাড়- দিতে দেখেছে, নিজেও যেন সুইপার পেশাটা পেয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে, আরো উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে সামাজিক বঞ্চনা। সারাজীবন হোটেলের বাইরে বসে সুইপারদের জন্য নির্ধারিত কাপে চা খেয়েছে, মানুষ তাকে দেখে নাকে ঢাকা দিয়েছে। এই সামাজিক বঞ্চনা ঝুমলালের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করেছে। তাই ঝুমলাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছোট ছেলে হরলালকে যেমন করেই হোক সে মানুষ করবে। তার জীবন থেকে সুইপারের কলঙ্ক মুছে দিবে।
ঝুমলালের পরিচিত রেজা সাহেব নিঃসন্তান, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, ঢাকায় বসবাস করেন। ঝুমলাল রেজা সাহেবের কাছে হরলালকে নিয়ে যায়, তাঁকে অনুরোধ করে হরলালকে পোষ্য হিসাবে গ্রহণ করার জন্য এবং প্রতিজ্ঞা করে সে কোনোদিন পিতৃত্বের দাবি নিয়ে আসবে না। হরলালের চেহারা আর বুদ্ধিদীপ্ত চোখ দেখে রেজা সাহেব এবং কাকলী হরলালকে পোষ্য হিসাবে গ্রহণ করেন এবং তার নাম রাখেন কনক। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে কনক। এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি পাসের পর কনক বুয়েটে ভর্তি হয়। বুয়েটে লেখাপড়ার সময় কনকের সঙ্গে পরিচয় হয় শাওনের। দু’জনে গভীর প্রেমে জড়িয়ে পড়ে, শাওন যেন নিজের চেয়ে কনককে বেশি ভালোবাসে। বিষয়টা উভয় পরিবারের মধ্যে জানাজানি হয়ে যায়। উভয় পরিবার বিয়েতে সম্মতি দেয়। কনক বুয়েট থেকে বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে।
কনকের বাবা রেজা সাহেবের এ্যাপার্টমেন্টের ব্যবসা আছে। কনক প্রথমে সিদ্ধান্ত নেয় সরকারি চাকরি করবে কিন' বাবা-মা’র অনুরোধে শেষ পর্যন্ত এ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসায় যোগ দেয়। কনক এ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসায় যোগ দেয়ায় অফিসে কর্মরত রাহাত সাহেবের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের সুচনা হয়। রাহাত সাহেব খুব জটিল প্রকৃতির মানুষ তার মনে সন্দেহ দেখা দেয়, ‘‘আমার দীর্ঘ ১৫ বছরের চাকরি জীবনে জানি স্যারের কোনো ছেলে-মেয়ে নেই এখন হঠাৎ করে স্যারের ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ছেলে এলো কীভাবে?’’
তিনি কনকের জন্মসূত্র খুঁজতে শুরু করেন এবং একসময় কনকের জন্মসূত্র খুঁজে বের করেন ঝুমলালকে মুখোমুখি করেন রেজা সাহেব এবং কনকের। ততদিনে কনক আর শাওনের বিয়ের আয়োজন প্রায় শুরু হয়েছে। শাওনের বাবা জাকারিয়া সাহেব গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। কনকের প্রকৃত পিতৃপরিচয় জানার পর শাওনের বাবা তাকে কনকের সঙ্গে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান।
রেজা সাহেব বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যান। কনকের নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। কনক রেজা সাহেবের বাসা থেকে বের হয়ে চাকরি খুঁজতে থাকে এবং একটা বেসরকারি সংস্থায় জয়েন করে তারপর ছুটে যায় তার জন্মদাতা ঝুমলালের কাছে। ঝুমলালের সঙ্গে দেখা করে ঢাকায় ফিরে তার ম্যাসে বসে টি.ভিতে দেখতে পায় শাওনের বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গু হাসপাতালে। কনক ছুটে যায় হাসপাতালে, শাওনের বাবাকে রক্ত দিতে, জাকারিয়া সাহেব তাঁর ভুল বুঝতে পারেন। কনক রক্ত দিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসে পিছু পিছু শাওনও বেরিয়ে আসে।
কনক ক্ষোভের সঙ্গে বলে শাওন তুমি ফিরে যাও, এখন তো আমার পিতৃপরিচয় জানো আমি একজন সুইপারের ছেলে আর তুমি সম্ভ্রান্ত বংশের প্রতিষ্ঠিত বাবার একমাত্র সন্তান। আমার জন্য তুমি তোমার সবকিছু ছেড়ে আসবে কেনো?
শাওন আবেগপ্রবণ হয়ে বলে, তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না কনক, তবুও আমি তোমার।
জিল্লুর রহমান
জিল্লুর রহমান ০১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৮ খ্রি. দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: মৃত: ইউনুছ আলী, মাতা: মোছা. মরিয়ম নেছা। মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ধর্মপুর ইউ.সি দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি এবং দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিটিউট থেকে প্রথম বিভাগে ডিপ্লোমা-ইন-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। পাশাপাশি বিরল কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন।
ছাত্রজীবন শেষে তিনি স্কাই টাচ এ্যাপার্টমেন্ট, বেসরকারি সংস্থা কারিতাস এবং নটরডেম কলেজে দীর্ঘ দিন কাজ করার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগদান করেন।
লেখালেখির অভ্যাস ছাত্রজীবন থেকেই, তাঁর লেখা প্রথম কবিতা দৈনিক তিস্তা পত্রিকায় তারপর দৈনিক উত্তর বাংলাসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।