সেলিনা হােসেনের জন্ম ১৪ জুন, ১৯৪৭, রাজশাহী শহরে । পৈতৃক নিবাস বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার হাজীরপাড়া গ্রাম। পিতা এ কে মােশাররফ হােসেন রাজশাহী রেশমশিল্প কারখানার পরিচালক ছিলেন। মাতার নাম মরিয়মন্নেসা বকুল। পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান। ষাটের দশকের মধ্যভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে লেখালেখির সূচনা। সেই সময়ের লেখা নিয়ে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘উৎস থেকে নিরন্তর' প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। উপন্যাস, গল্প, শিশুসাহিত্য, প্রবন্ধ, ভ্রমণসহ লেখালেখির নানাক্ষেত্রে তিনি বিচরণ করেছেন, করছেন। সেলিনা হােসেনের লেখার জগৎ বাংলাদেশের মানুষ, তার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। বেশ কয়েকটি উপন্যাসে বাংলার লােক-পুরাণের উজ্জ্বল চরিত্রসমূহকে নতুনভাবে তুলে আনেন। তাঁর উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়। সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংকটের সামগ্রিকতা। বাঙালির অহঙ্কার ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তাঁর লেখায় নতুন মাত্রা অর্জন করে। জীবনের গভীর উপলব্ধির প্রকাশকে তিনি শুধু কথাসাহিত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন না, শাণিত ও শক্তিশালী গদ্যের নির্মাণে প্রবন্ধের আকারেও উপস্থাপন করেন। নির্ভীক তাঁর কণ্ঠকথাসাহিত্যে, প্রবন্ধে । ভ্রমণ তার নেশা। সুযােগ পেলেই ছুটে যান বাংলাদেশের আনাচেকানাচে সর্বত্র। সমুদ্র উপকূল, পার্বত্য এলাকা, হাওড় অঞ্চল, প্রত্যন্ত গ্রাম সেখানকার কল্লোলিত বিচিত্র জীবন যেমন তাঁর লেখায় উঠে আসে, তেমনি ওদের সঙ্গে সময় কাটাতেও তিনি ভালােবাসেন। সংকীর্ণ জাতীয়তায় আক্রান্ত নন তিনি। পৃথিবী তাঁর কাছে 'বাউন্ডলেস ইউনিভার্স'। সব কিছুর উর্ধ্বে মানুষ। তাই সেই মানুষের জীবনযাত্রার বৈচিত্র্যকে খুব কাছে থেকে দেখার আগ্রহে তিনি ভ্রমণ করেছেন ভারত, নেপাল, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, প্রাক্তন সােভিয়েত ইউনিয়ন, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি প্রভৃতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। গবেষণামূলক লেখাও লিখতে হয়েছে।
সেলিনা হোসেন
সেলিনা হােসেনের জন্ম ১৪ জুন ১৯৪৭, রাজশাহী শহরে। ষাটের দশকের মধ্যভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে লেখালেখির সূচনা। প্রথম গল্পগ্রন্থ উৎস থেকে নিরন্তর প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। রাজশাহীতে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বিভাগীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযােগিতায় চ্যাম্পিয়নশিপ স্বর্ণপদক পান। ড. মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক (১৯৬৯); বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮০); আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১); অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪); শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৬ ও ১৯৯৭); দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্যে রামকৃষ্ণ জয়দয়াল হারমােনি অ্যাওয়ার্ডস’, দিল্লি (২০০৬); জাতীয় পুরস্কার একুশে পদক (২০০৯); দিল্লির ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট থেকে রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (২০১০); ঢাকা লেডিস ক্লাব কর্তৃক লায়লা সামাদ স্বর্ণপদক (২০১১); রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা থেকে ডিলিট উপাধি (Honoris Causa) ২০১০; গায়ত্রী সন্ধ্যা’ উপন্যাসের জন্য আইআইপিএম, দিল্লি কর্তৃক রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার ২০১০। দিল্লির সাহিত্য আকাদেমী থেকে প্রেমচাঁদ ফেলােশিপ লাভ ২০০৯। নীল ময়ূরের যৌবন’ ও ‘যাপিত জীবন’ উপন্যাস রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড উপন্যাস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ পত্রে পাঠ্য প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতায় গল্প পাঠ্য। গায়ত্রী সন্ধ্যা’, ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ৩টি উপন্যাস নিয়ে এমফিল থিসিস সম্পন্ন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যের ওকটন কমিউনিটি কলেজে ২০০৬ সালে দুই সেমিস্টারের পাঠ্য ছিল ‘হাঙর নদী গ্রেনেড' উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন ও জেন্ডার স্টাডিস ডিপার্টমেন্টে কালকেতু ও ফুল্লরা' উপন্যাস পাঠ্য। ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি, কন্নড়, রুশ, মালে, ফরাসি, জাপানি, উর্দু, মালয়েলাম, কোরিয়ান, ফিনিস, আরবি প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর গল্প এবং উপন্যাস। ইংরেজিতে অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা দশটি।