নুবাদকের কথা ভারতের অন্যতম সফল লেখক খুশবন্ত সিং এর ‘বুক অফ আনফরগটেবল ওম্যান’ তার জীবনে আসা নারী এবং তার পরিচিত বিশিষ্ট মহিলা ব্যক্তিত্বদের উপর বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রের কলামে যা লিখেছেন তার সংকলিত রূপ। এতে স্থান পেয়েছে খুশবন্ত সিং-এর প্রথম যৌবনের বান্ধবী গায়রুনিয়া হাফিজের কাহিনী, যার সাথে সম্পর্কের কারণে মুসলমানদের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়েছিল। ভারতীয় মুসলমানরাও যে তাদের দেশকে হিন্দু ও শিখদের মতোই ভালবাসে এবং জাতীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যে তারা ভুল করতে পারে না এ উপলব্ধিও সৃষ্টি হয় তার মধ্যে। লেখক তার স্ত্রী কাভাল মালিককেও চিত্রায়িত করেছেন, যিনি গণমাধ্যমের প্রচারণার প্রতি বিরূপ এবং নিস্পৃহ হলেও নিজের বিশ্বাস ও সিদ্ধান্তে অটল। বিতর্কিত শিল্পী অমৃতা শেরগিল, মাদার তেরেসা, ফুলন দেবীর বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন চমৎকারভাবে। তার বর্ণনা সংশ্লিষ্ট নারী ব্যক্তিত্বদের জীবনী নয়, জীবন ও কর্মের বিশেষ এবং উল্লেখযোগ্য দিকই শুধু পরিস্ফুট হয়েছে। এছাড়াও খুশবন্ত সিং-এর উপন্যাস ও ছোটগল্পের বেশ কিছু সংখ্যক নারী চরিত্রকে এ গ্রন্থে স্থান দেয়া হয়েছে। ব্ল্যাক জেসমিন মার্থা স্ট্যাক, লেডি মোহন লাল, জীন মেমসোহেব, ইতিহাস ভিত্তিক উপন্যাস ‘দিল্লি’র হিজড়া বেশ্যা ভাগমতি, উনিশ’শ সাতচল্লিশ সালে দেমবিভাগের পটভূমিকে কেন্দ্র করে রচিত ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’ এর কৃষ্ণ নয়না নূরান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ভারতে বৃটিশ বিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রেক্ষাপটে লিখা ‘আই শ্যািল নট হিয়ার দ্য নাইটঙ্গেল’ উপন্যাসের যৌনকাতর গৃহবধু চম্পক এবং দৃশ্যত যৌন অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ উপন্যাস ‘দ্য কম্প্যানি অফ ওম্যান’-এর বেশি ক’টি চরিত্র গৃহপরিচারিকা ধান্নো, কলেজে ইংরেজী শিক্ষিকা সরোজিনী ভরদ্বাজ, আজাদ কাশ্মীরের এক মন্ত্রীর স্ত্রী ইয়াসমিন ওয়ানচো, গোয়ার মালিশ কারিনী মলি গোমেজের সাবলীল সুপাঠ্য বিবরণ পাঠকদের উজ্জীবিত করার জন্যে যথেষ্ট।
খুশবন্ত সিং-এর রচনাশৈলীর সাথে বাংলাদেশের পাঠকসমাজ পরিচিত। তার অধিকাংশ রচনায় মানুষের যৌন চেতনা ও আচরণের খোলামেলা বর্ণনা রয়েছে, যা অনেক পাঠকের কাছে বিব্রতকর বিবেচিত হলেও জীবন বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তার বর্ণনার মাঝে ন্যাকামি নেই, অসততা নেই। খোলামেলা প্রকাশের সততায় সমৃদ্ধ খুশবন্ত সিং- এর প্রতিটি উপন্যাস, ছোটগল্প এবং অন্যান্য রচনা।