আমাদের বাড়িতে সকালের দিকে হইচই একটু বেশি হয় । আমার মা, বয়সের কারণেই হােক কিংবা অন্য যে কোনাে কারণেই হােক সকালবেলায় রেগে আগুন হয়ে থাকেন। যাকে দেখেন তার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ের প্রবল ঝাপটা বেশিরভাগ সময় আমার বড় ভাইয়ের উপর দিয়ে যায়। বেচারার দোষ তেমন কিছু থাকে নাহয়তাে টুথপেস্টের টিউবের মুখ লাগানাে হয় নি, কিংবা বাথরুমের পানির কল খােলা-এই জাতীয় তুচ্ছ ব্যাপার। রেগে আগুন হবার মতাে কিছু না। আজও বেচারা বকা খাচ্ছে। মার গলা ক্রমেই উঁচুতে উঠছে। অন্যপক্ষ চুপচাপ । বড় ভাই আত্মপক্ষ সমর্থন করেও কিছু বলছেন না, কারণ কথা বললেই বিপদ। আত্মরক্ষার একমাত্র উপায়নীরবতা। মার একতরফা কথাবার্তা থেকে যা বােঝা যাচ্ছে তা হচ্ছে বুনােভাই দাড়ি শেভ করেন নি। বড় ভাইয়ের ডাকনাম বুনাে। আমরা সবাই তাঁকে বুনাভাই ডাকি। যার নাম বুনাে তাঁর স্বভাব-চরিত্রে বন্যভাব প্রবল হওয়ার কথা । তা - কিন্তু না। বুনােভাই খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ। এই যে মা তুফান মেল চালাচ্ছেন তিনি একটা শব্দও করছেন না। মিটিমিটি হাসছেন। মা হড়বড় করে বলছেন, তুই ভেবেছিস কী? তাের অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেছি গতকালও তুই শেভ করিস নি। আজওনা। তাের মূখভর্তি খোঁচা খােচা দাড়ি। ঘরে কি ব্লেড কেনার টাকা নেই? নাকি তােকে প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র কিনে দেয়া হয় না? হাসছিস কেন? এত কিছু শােনার পরেও তাের হাসি আসে? হাসি খুব সস্তা হয়ে গেছে?
হুমায়ূন আহমেদ
পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু খারাপ বাবা একটাও নেই।'
হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের প্রবাদপ্রতিম জনপ্রিয় একজন ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় লেখক বলে গণ্য করা হয়। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৩ নভেম্বর, ১৯৪৮, নেত্রকোনা জেলায়। তার আত্মজীবনীতে নেত্রকোনার নানান কথা উঠে এসেছে। এমনকি সেখানে তিনি 'শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ' নামে একটি স্কুল ও প্রতিষ্ঠা করেছেন।
মারা গেছেন: ১৯ জুলাই, ২০১২, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে সময়ে তিনি লিখেছিলেন 'নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ' এখানে তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সময় পাওয়া যায়। ' এখানে তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সময় পাওয়া যায়।
সন্তান শীলা আহমেদ, নুহাশ হুমায়ূন, নোভা আহমেদ, বিপাশা আহমেদ, নিনিত আহমেদ, নিষাদ আহমেদ। নুহাশ হুমায়ুন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার । তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল 'ইতি তোমারই ঢাকা', 'পেটকাটা ষ' ও 'মশারি'। ২০১৮ সালে 'ইতি তোমারই ঢাকা' নাটকটির মাধ্যমে বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে।
ভাইবোন: মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব, রুখসানা আহমেদ, সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শাহিদ। ভাইবোনদের মধ্যে প্রায় সবাই লেখক। মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন লেখক। আহসান হাবীব উম্মাদ নামক একটি বহুল প্রচারিত রম্য পত্রিকার সম্পাদক।
জনপ্রিয় উপন্যাসসমূহ:
বাদশাহ নমদার
শঙ্খনীল কারাগার
আগুনের পরশমনি
মেঘ বলেছে যাবো যাবো
বাদশাহ নামদার
অপেক্ষা
নন্দিত নরকে
এইসব দিনরাত্রি সহ আরো আরো অনেক। (যারা হুমায়ূন পাঠে ভীষণ ভীষণ আগ্রহী তারা আরো আরো বইয়ের নাম জানতে চাইলে বই বাজার ডট কমে খুজে দেখতে পারেন। তার সমস্ত বই আমাদের সাইটে পাবেন।) আপনার পড়া হুমায়ূনের বইয়ের নাম আমাদের জানান।
হুমায়ূন পাঠ আপনার সময়কে রাঙিয়ে তুলবে না শুধু, আপনার সময়কে আপনার কাছে নিয়ে আসবে, আপনাকে হাসিকান্নায় মাতিয়ে তুলবে। বই পড়ুন, বইয়ের সাথে থাকুন।