মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ.তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর যে সকল উস্তাদ ও বন্ধু-বান্ধব ইন্তেকাল করতেন তাঁদেরকে নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখতেন,স্মৃতিচারণ করতেন।তাঁর এ লেখাগুলোতে আমাদের আকাবিরদে অনেক তথ্য ও সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ বিষয় ফুটে উঠেছে। যেমন অাপনি তাঁর এ লেখাগুলোতে পাবেন,শাইখুল হিন্দের ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনে ছোটাছুটি,স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর কর্মপদ্ধতি,রেশমী রোমাল আন্দোলনের অভিনব কৌশল,কাদিয়ানি ফেৎনা প্রতিরোধে আল্লামা আনোওয়ার শাহ কাশ্মিরীর চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও কর্মতৎপরতা,হাজারো কুসংস্কারে নিমজ্জিত উম্মাহকে সঠিক পথ দেখাতে হাকীমুল উম্মত হযরত থানবীর বড় বড় ইলমিকারনামার প্রেক্ষাপট ও কর্মপদ্ধতি,হযরত হুসাইন অাহমাদ মাদানী রহ.এর নেতৃত্বে দারুল উলূম দেওবন্দের উস্তাদদের ‘গ্রুপস্টাডি’ থেকে শুরু করে প্রতিবেশীর দারিদ্রতার কথা মাথায় রেখে সাইয়্যেদ আসগর হুসাইন সাহেবের আজীবন মাটির ঘরে বসবাসের অসাধারণ সব চিন্তা-চেতনা ও কর্মের বিবরণ।মুফতি মুহাম্মাদ শফী রহ. এর মৃত্যুর পর তাঁর এ মূল্যবান লেখাগুলো বিক্ষিপ্ত ছিল বিভিন্নপেপার-পুস্তিকায়।জনাব অাকবার শাহ বুখারী সাহেব দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত ‘মাসিক অাল-মুফতি’ দারুল উলূম করাচী থেকে প্রকাশিত ‘মাসিক আল-বালাগ’সহ অারো যে সব পত্র-পত্রিকায় তাঁর এ লেখাগুলো প্রকাশ হয়েছে সবগুলো থেকে একত্র করে চান্দ আযীম ছখছিয়্যাত নামে একটি কিতাব ছেপেছেন।‘মাকতাবাতুস সুন্নাহ’ এখন ‘‘আমার দেখা মনীষী’’ নামে বইটির বাংলা অনুবাদ ছেপেছে।আলহামদুলিল্লাহ্,ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ্। - মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও মনীষী । তিনি দারুল উলূম দেওবন্দ এবং দেশ বিভাগের পর পাকিস্তানের মুফতীয়ে আযম বা প্রধান মুফতী (গ্রান্ড মুফতী) ছিলেন। ১৩১৪ হিজরী সনের শা'বান মাসের ২১ তারিখে বা ২৫ জানুয়ারি ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর নাম "মুহাম্মাদ শফী" হযরত রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রাহ. কর্তৃক প্রস্তাবিত। ১৩২৫ হিজরী বা ১৯০৭/১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন । তিনি ১৩৩৬ হিজরীতে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন, তখন তার বয়স ২১ বছর ছিল। এরপর ১৩৩৭ হিজরীতে তিনি দারুল উলূম দেওবন্দের প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি খুবই তাড়াতাড়ি দারুল উলূম দেওবন্দের উচ্চতর শ্রেণীর শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি ১৩৫০ হিজরী সনে দারুল উলূম দেওবন্দের মুফতীয়ে আযম বা প্রধান মুফতী (গ্রান্ড মুফতী) নিযুক্ত হন। দেশ বিভাগের পর তিনি তাঁর পিতৃভূমি দেওবন্দ ছেড়ে পাকিস্তান চলে আসেন। তিনি ১৩৭০ হিজরীতে, ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানে দারুল উলুম করাচী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় দেড়শত এর মত বই লিখেছেন। তার বিশ্বখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ "মা'আরিফুল কুরআন" যা বহুল ভাষায় অনুবাদ হয়েছে । তিনি তা সমাপ্ত করেন (ঊর্দূতে) তার ইন্তেকালের চার বছর আগে। এই আলেমে দ্বীন ও মনীষী ১৩৯৬ হিজরী সনের শাওয়াল মাসের ১০ তারিখে ইন্তেকাল করেন।