বাংলাদেশের অন্যতম লােকসাহিত্য গবেষক ও প্রাবন্ধিক শামসুজ্জামান খানের জন্ম ১৫ জুন ১৯৩৭। কৈশােরেই তাঁর সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত। স্কুলে পড়াকালে যৌথ সম্পাদনায় বের করেন হাতে-লেখা সাহিত্যপত্রিকা ‘পূর্বাভাষ'। প্রথম লেখা ছাপা হয় দৈনিক আজাদের মুকুলের মহফিল-এ, ১৯৫৭ সালে। 'লাল শার্ট' শিরােনামের গল্পটির বিষয় ছিল ভাষা আন্দোলনের শহিদ রফিকের জীবন। ষাটের দশক থেকে কচিকাঁচার মেলার সংগঠক হিসেবে অজিত কুমার গুহ, সুফিয়া কামাল, আবদুল্লাহ আল-মুতী এবং রােকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের সঙ্গে সারা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন।
তার উল্লেখযােগ্য গ্রন্থের মধ্যে আছে-মাটি থেকে মহীরুহ, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ ও প্রাসঙ্গিক কথকতা, কালের ধুলােয় স্বর্ণরেণু, বাংলার গণসংগীত, আধুনিক ফোকলাের চিন্তা, বর্ধমান হাউসে রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য প্রবন্ধ, সাম্প্রতিক ফোকলাের ভাবনা, বাংলা সন ও তার ঐতিহ্য ইত্যাদি। এ ছাড়াও শিশুসাহিত্যবিষয়ক অনেকগুলাে বই রয়েছে ।
তিনি ২০০১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮৭ ও ২০১২ সালে অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার পান। এর আগে ১৯৬৭ সালে শামসুজ্জামান খানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় কিশােরগল্প সংকলন 'সূর্যমুখী'। সংকলনটি তৎকালীন পূর্ববাংলার শিশুকিশাের সাহিত্যে একটি উল্লেখযােগ্য সংকলন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ১৯৬৮ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ পুরস্কার অর্জন করে।
শিক্ষকতা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু। ২০০৯ সাল থেকে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। ২০১৭ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন।
সেলিনা হোসেন
সেলিনা হােসেনের জন্ম ১৪ জুন ১৯৪৭, রাজশাহী শহরে। ষাটের দশকের মধ্যভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে লেখালেখির সূচনা। প্রথম গল্পগ্রন্থ উৎস থেকে নিরন্তর প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। রাজশাহীতে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বিভাগীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযােগিতায় চ্যাম্পিয়নশিপ স্বর্ণপদক পান। ড. মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক (১৯৬৯); বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮০); আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১); অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪); শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৬ ও ১৯৯৭); দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্যে রামকৃষ্ণ জয়দয়াল হারমােনি অ্যাওয়ার্ডস’, দিল্লি (২০০৬); জাতীয় পুরস্কার একুশে পদক (২০০৯); দিল্লির ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট থেকে রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (২০১০); ঢাকা লেডিস ক্লাব কর্তৃক লায়লা সামাদ স্বর্ণপদক (২০১১); রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা থেকে ডিলিট উপাধি (Honoris Causa) ২০১০; গায়ত্রী সন্ধ্যা’ উপন্যাসের জন্য আইআইপিএম, দিল্লি কর্তৃক রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার ২০১০। দিল্লির সাহিত্য আকাদেমী থেকে প্রেমচাঁদ ফেলােশিপ লাভ ২০০৯। নীল ময়ূরের যৌবন’ ও ‘যাপিত জীবন’ উপন্যাস রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড উপন্যাস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ পত্রে পাঠ্য প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতায় গল্প পাঠ্য। গায়ত্রী সন্ধ্যা’, ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ৩টি উপন্যাস নিয়ে এমফিল থিসিস সম্পন্ন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যের ওকটন কমিউনিটি কলেজে ২০০৬ সালে দুই সেমিস্টারের পাঠ্য ছিল ‘হাঙর নদী গ্রেনেড' উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন ও জেন্ডার স্টাডিস ডিপার্টমেন্টে কালকেতু ও ফুল্লরা' উপন্যাস পাঠ্য। ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি, কন্নড়, রুশ, মালে, ফরাসি, জাপানি, উর্দু, মালয়েলাম, কোরিয়ান, ফিনিস, আরবি প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর গল্প এবং উপন্যাস। ইংরেজিতে অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা দশটি।