ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ ইতিহাসের ঘটনা শুধু ইতিহাসে সীমাবদ্ধ থাকে না। সেইসব ঘটনা ইতিহাসের সীমানা পেরিয়ে গভীর মানবিক উপাখ্যানে পরিনত হয়। ‘আগস্টের একরাত’ মানবিক উপখ্যানের চিরায়ত গল্পকথা, যেখানে জীবন-মৃত্যুর পাশাপাশি মানুষের নৃশংসতাও ইতিহাসের পৃষ্ঠায় এক গভীর সত্য। ‘আগস্টের একরাত’ বঙ্গবন্ধু ওতার পরিবারের হত্যাকাণ্ডের পটভূমিতে রচিত হিউম্যান ট্র্যাজেডির উপখ্যান। হত্যাকাণ্ডের বিচারে ৬১ জন সাক্ষী আদালতে জীবনবন্দি দিয়েছিলেন। সাক্ষীদের এই সব জবানবন্দি কাহিনীর প্রয়োজনে উপন্যাসজুড়ে ব্যবহৃত হয়েছে। লেখক একদিকে গল্প বানিয়েছেন অন্যদিকে জবানবন্দি উপস্থাপন করে ঘটনার বিবরণ সংযুক্ত করেছেন।ফলে উপন্যাসের সাধু ও চলিত ভাষার ব্যবহার অনিবার্য ছিল। নি:সন্দেহে বলা যায় ভাষার এই দুই ধারা উপস্থাপনের আঙ্গিকে ভিন্নতা এনেছে। এই উপনস্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্ররা মৃত। ভিন্নধর্মী আঙ্গিকের কারণে উপন্যাসের পৃষ্ঠাজুড়ে তাদের উপস্থিতি ছিল। এই উপন্যাসে সময় উথালপাথাল চরিত্র। কাহিনী নির্মাণের প্রয়োজনে সময়ের ধারাবাহিকতার আগপিভ করা হয়েছে। এই আগপিছ উপন্যাসের আঙ্গিক-বিন্যাস। শিল্পের সাধনা পাঠকের নান্দনিক বোধের তৃষ্ণা মেটায়। যে কোনো ধরনের প্রচেষ্টা শিল্পের সুষমাকে প্রাণবন্ত করে । লেখকের অন্তহীন চেষ্টা এই সুষমার প্রথম শর্ত।
সেলিনা হোসেন
সেলিনা হােসেনের জন্ম ১৪ জুন ১৯৪৭, রাজশাহী শহরে। ষাটের দশকের মধ্যভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে লেখালেখির সূচনা। প্রথম গল্পগ্রন্থ উৎস থেকে নিরন্তর প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। রাজশাহীতে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বিভাগীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযােগিতায় চ্যাম্পিয়নশিপ স্বর্ণপদক পান। ড. মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক (১৯৬৯); বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮০); আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১); অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪); শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৬ ও ১৯৯৭); দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্যে রামকৃষ্ণ জয়দয়াল হারমােনি অ্যাওয়ার্ডস’, দিল্লি (২০০৬); জাতীয় পুরস্কার একুশে পদক (২০০৯); দিল্লির ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট থেকে রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (২০১০); ঢাকা লেডিস ক্লাব কর্তৃক লায়লা সামাদ স্বর্ণপদক (২০১১); রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা থেকে ডিলিট উপাধি (Honoris Causa) ২০১০; গায়ত্রী সন্ধ্যা’ উপন্যাসের জন্য আইআইপিএম, দিল্লি কর্তৃক রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার ২০১০। দিল্লির সাহিত্য আকাদেমী থেকে প্রেমচাঁদ ফেলােশিপ লাভ ২০০৯। নীল ময়ূরের যৌবন’ ও ‘যাপিত জীবন’ উপন্যাস রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড উপন্যাস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ পত্রে পাঠ্য প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতায় গল্প পাঠ্য। গায়ত্রী সন্ধ্যা’, ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ৩টি উপন্যাস নিয়ে এমফিল থিসিস সম্পন্ন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যের ওকটন কমিউনিটি কলেজে ২০০৬ সালে দুই সেমিস্টারের পাঠ্য ছিল ‘হাঙর নদী গ্রেনেড' উপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন ও জেন্ডার স্টাডিস ডিপার্টমেন্টে কালকেতু ও ফুল্লরা' উপন্যাস পাঠ্য। ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি, কন্নড়, রুশ, মালে, ফরাসি, জাপানি, উর্দু, মালয়েলাম, কোরিয়ান, ফিনিস, আরবি প্রভৃতি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর গল্প এবং উপন্যাস। ইংরেজিতে অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা দশটি।