বিস্মৃত সৈনিক (হার্ডকভার)

ইতিহাস আশ্রয়ী এক রাজনৈতিক উপন্যাস লিখেছেন আব্দুল্লাহ অপু। উপন্যাসের নাম 'বিস্মৃত সৈনিক'। 

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, যুদ্ধকালীন রাজনীতি, বিশ্বনেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি, মুজিবনগর সরকারের সাথে যুবনেতাদের দ্বন্দ্ব, আরও অনেক চাপা পড়ে থাকা সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা হয়েছে উপন্যাসটি।

উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র এক অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। উইলিয়াম ওডারল্যান্ড তাঁর নাম। যুদ্ধের সময় তিনি বাটা সু'র কান্ট্রি হেড হিসেবে টঙ্গীতে ছিলেন। ২৫ মার্চ রাতের গণহত্যার ভয়াবহ চিত্র এই মানুষটা নিজ চোখে দেখলেন, তাঁর মনোজগতে ঝড় বয়ে গেল, সিদ্ধান্ত নিলেন যুদ্ধ করবেন বাঙালির হয়ে। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বয়সে তরুণ ছিলেন উইলিয়াম ওডারল্যান্ড। প্রথম যৌবনে   তিনি যুদ্ধ করেছিলেন হিটলারের নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে। মাঝ বয়সে এসে সেই ভিনদেশি যোদ্ধা আবার অস্ত্র হাতে তুলে নিলেন বাঙালির মুক্তির প্রত্যয় নিয়ে। 

উপন্যাসে আছে ঐতিহাসিক সব চরিত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, মাওলানা ভাসানী, জুলফিকার আলি ভুট্টো, ইয়াহিয়া খান, ইন্দিরা গান্ধী, পোদগর্নি, রিচার্ড নিক্সন, হেনরি কিসিঞ্জার। 

রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের বীরত্বগাঁথা উঠেছে এসেছে নিপুণভাবে। কর্নেল ওসমানী, মেজর জিয়াউর রহমান, খালেদ মোশাররফ, এটিএম হায়দার, শাফায়ত জামিল। 

ঢাকার গেরিলাদের দু:সাহসিক অভিজানের কথা আছে। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আজম খান, সাদেক হোসেন খোকা, রুমী, বদি, জুয়েল, আজাদ, চুল্লু, গাজি গোলাম দস্তগীর, কাজি কামাল, নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুদের বীরত্বগাঁথা।

পাকিস্তানি জেনারেলদের দৃষ্টিভঙ্গি, কার্যকলাপ, তাদের সহযোগীদের ভূমিকা উঠে এসেছে উপন্যাসে। 

বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়, পাক আর্মির আত্মসমর্পণ, যুদ্ধপরবর্তী সময়ে ভারতীয় আর্মির লুটপাটের চিত্র ফুটে উঠেছে এখানে। 

পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর দিন কিভাবে কেটেছে তা সুনিপুণভাবে উঠে এসেছে গল্পে, স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার মধ্য দিয়ে বাঙালির প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদপ্রাপ্তির চিত্র ফুটে উঠেছে। 

স্বাধীন বাংলাদেশে ধীরে ধীরে বিস্মৃত হতে থাকে রণাঙ্গনের যোদ্ধারা। অপমান, লাঞ্চনা, গঞ্জনা জুটল তাদের কপালে। রণাঙ্গনের সেই ভিনদেশি মানুষটাকে ভুলে যেতে থাকে স্বাধীন বাংলাদেশ। 

পুরো উপন্যাসটি পড়লে পাঠক ফিরে যাবে একাত্তরের সেই উত্তাল দিনগুলিতে। বইটি পড়লে মনে হবে গল্পের চরিত্রগুলো যেন চোখের সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যুদ্ধের সেই সব লোমহর্ষক ঘটনাগুলো যেন চোখের সামনেই ঘটছে!