বৃদ্ধ কুরু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, পৃথিবীতে এখন খুব দুঃসময়।" ছােট শিশু অর্থহীন কথা বললে বড় মানুষেরা যেভাবে সকৌতুকে তার দিকে তাকায় অনেকে সেভাবে মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকাল । কেউ কোনাে কথা বলল না। পৃথিবীর মানুষ আজকাল বেশি কথা বলে না, কী নিয়ে কথা বলবে কেউ জানে না। বৃদ্ধ কুরুর মতাে দুই-একজন ছাড়া সবাই জন্মের পর থেকেই দেখে আসছে পৃথিবীতে খুব বড় দুঃসময়। সবাই সেটা মেনে নিয়ে কোনোভাবে বেঁচে আছে, সেই বেঁচে থাকাটাও খুব অর্থপূর্ণ বেঁচে থাকা নয়। তাই কেউ সেগুলাে নিয়ে কথা বলতে চায় না। সেটা নিয়ে কেউ কোনাে অভিযােগও করে না। শস্যক্ষেত্রের পাশে উঁচু টিবিতে দাঁড়িয়ে থেকে সবাই উত্তর দিকে তাকিয়ে রইল । বহুদূরে কোথাও আগুন লেগেছে, সেই আগুন থেকে কুণ্ুলি পাকিয়ে কালাে ধাঁয়া আকাশে উঠছে। এটি কোনাে নতুন দৃশ্য নয়, তারা দেখছে দূরে কোথা থেকে জানি মাঝে মাঝে কুণ্ডুলী পাকিয়ে কালাে ধোঁয়া আকাশে ওঠে। যতই দিন যাচ্ছে সেই ধোঁয়ার কুণ্লি আরাে ঘন ঘন এবং আরাে অনেকদিন থেকেই কাছাকাছি দেখা যাচ্ছে। কে জানে কোনো একদিন হয়তাে এই গ্রামটা দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে। এই গ্রামের বাড়িঘর, শস্যক্ষেত্র সব পুড়ে ছাই হয়ে যাবে আর কুচকুচে কালাে ধােয়া আকাশে পাক খেয়ে উঠতে থাকবে। রুহান নিঃশব্দে দূরে তাকিয়ে রইল, কালাে ধোঁয়ার রেখাটি একটি অশুভ সংকেতের মতাে ঝুলছে, সেটি থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখা যায় না। সেটা কত দূরে কেউ জানে না। পৃথিবীতে এখন কারাে সাথে কারাে যােগাযােগ নেই, তাই ঠিক কোথায় কী ঘটছে তা কেউ অনুমান করতে পারে না। মাঝে মাঝে ক্লান্ত বিধ্বস্ত অপরিচিত কোনাে মানুষ যখন এই গ্রামের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে যায়।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
মুহম্মদ জাফর ইকবাল জন্ম : ২৩ ডিসেম্বর ১৯৫২, সিলেট। বাবা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র, পিএইচডি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন থেকে। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং বেল কমিউনিকেশান্স রিসার্চে বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করে সুদীর্ঘ আঠার বছর পর দেশে ফিরে দীর্ঘদিন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্ত্রী প্রফেসর ড. ইয়াসমীন হক, পুত্র নাবিল এবং কন্যা ইয়েশিম।