বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি লেখক ও বৈমানিক অ্যান্টনি দ্য সেইন্ট-এগজ্যুপেরি (১৯০০-১৯৯৪) চার বছর বয়সে পিতৃহারা হন। বিশ বছর বয়সে লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। ১৯২১ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯২৬ সালে বেসামরিক বিমানের বৈমানিক হিসেবে বিমান চালনা শুরু করেন। ওই বছরই পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্প ‘বৈমানিক’। অক্টোবর ১৯২৭ থেকে মার্চ ১৯২৯ পর্যন্ত তিনি উত্তর আফ্রিকার জুবি অন্তরীপে বিমানঘাঁটির প্রধান ছিলেন। ১৯২৯ সালে তিনি আর্জেন্টিনায় বদলি হন। ১৯৩১ সালে প্রকাশিত ‘রাতের উড়ান’-এর জন্য তিনি প্রি ফেমিনা নামের সাহিত্য পুরস্কার (১৯৩১) লাভ করেন। এছাড়া তিনি ফ্রান্সের সেরা কয়েকটি সাহিত্য পুরস্কার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘সাদার্ন মেইল’, ‘নাইট ফ্লাইট, ‘স্যান্ড অ্যান্ড স্টারস’, ‘ফ্লাইট টু আরাস’, ‘দ্য লিটল প্রিন্স’, ‘লেটার টু আ হস্টিজ’, ‘দি উইজডম অব দ্য স্যান্ডস’ প্রভৃতি। ‘ল্য প্যতি প্র্যাঁস’ ফরাসি এবং ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ হয়ে ১৯৪৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়। যার বাংলা অনুবাদ ‘ছোট্ট এক রাজপুত্র’ শিশুদের জন্য রচিত একটি পৃথিবীবিখ্যাত উপন্যাস। এটি এক শিশুর বয়ানে কাব্য ও দর্শনের অনন্যসাধারণ সাহিত্যকর্ম। ফরাসি ভাষায় লিখিত বইটি সর্বাধিক পঠিত হিসেবে বিবেচিত। বাংলাসহ পৃথিবীর অধিকাংশ ভাষায় এই গ্রন্থটি অনূদিত হয়েছে। ‘ছোট্ট এক রাজপুত্র’ প্রকাশিত হয় ১৯৪৩ সালে, লেখকের মৃত্যুর এক বছর আগে। সঙ্গে সঙ্গে বইটি পৃথিবীজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। লেখক এগজ্যুপেরি একটি ছবি বারবার এঁকেছেন-একটি শিশু, তার ডানা আছে বা নেই, সে মেঘের উপর থেকে পৃথিবীর দিকে, বাড়ির দিকে, ভেড়ার পালের দিকে তাকায়। অবাক করা ওই শিশুটি সেই মানুষটিকে মুহূর্তকালও স্বস্তির সুযোগ দেয় না, যে একইসঙ্গে বৈমানিক, যোদ্ধা ও মানুষের আত্মিক উন্নয়নের অক্লান্ত প্রচারক। মরুভূমির নিঃসঙ্গতায় বিধ্বস্ত বৈমানিকের সামনে রাজপুত্রের ভালোবাসা, বিরহ ও মৃত্যুতে একটি যন্ত্রণাময় জীবনের অবসান ঘটলেও তাতে অন্যত্র জীবনের আশ্বাস থাকায় তা ট্র্যাজেডি হয়ে ওঠেনি।