সে এক মাতাল স্বপ্নে বিভোর হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির পাঠ নিয়েছিল মালেক, সিতাবউদ্দীন, প্রিয়তোষ, সুলতান, রিচার্ড, মনোয়ার, লাবণ্য এবং আরও অনেকে।
সার্টিফিকেট-সর্বস্ব শিক্ষায় অরুচি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে কেউ কেউ চলে আসে গ্রামে, আন্ডারগ্রাউন্ডে। সারা দেশের কর্তৃত্ব গ্রহণ করবে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মজদুর শ্রেণি। এসব স্বপ্নের ঘোর ভেঙে এলো রক্তাক্ত একাত্তর। পরাধীনতার শেকল ভাঙার আহ্বানই তখন হয়ে ওঠে মুখ্য। পার্টির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয় মালেক, পিন্টু ও লাবণ্য। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে আসে বিজয়ের সোনালি প্রভাত।
আসে আমাদের ঘরে ফেরার সময়। যুদ্ধ শেষে থিতু হয়ে দাঁড়াবার সময়। কিন্তু মালেক একটি পা হারিয়ে বিজয়ের এক মাস পর ভারতের হাসপাতাল থেকে দেশের মাটিতে ফিরেই টের পায়—এরই মাঝে আমাদের দাঁড়াবার জায়গা হয়েছে বিধ্বস্ত, দাঁড়াবার সময় হয়েছে বিভ্রান্ত, বিপন্ন। একদিকে তার ভার মালেক মৃধা এবং তার দলবল স্বাধীনতার ফসল লুটেপুটে তুলছে আপন ঘরে; অন্যদিকে তারই পরিত্যক্ত স্বপ্নভুক দল সশস্ত্র বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শ্রেণিশত্রু খতমের নিষ্ঠুর লাইন গ্রহণ করে সেই দাঁড়াবার সময়কেই করে তুলেছে দুঃসহ দুঃসময়। মালেক তখন কোথায় দাঁড়ায়? পায়ের তলায় নির্ভরযোগ্য মাটি কোথায়?
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতেই সে জড়িয়ে পড়ে রাজনীতির কুটিল আবর্তে।
রফিকুর রশীদ
রফিকুর রশীদ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, মেহেরপুরে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন শেষে ১৯৮৩ সালে সিলেটের এক চা-বাগানে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে শুরু হয় তার কর্মজীবন। মন টেকে না চা-বাগানে। অচিরেই যােগ দেন কলেজশিক্ষকতায় এবং ৩৩ বছর কাটিয়ে দেন ওই পেশাতেই।
সত্তর দশকের শেষভাগে পত্রপত্রিকায় গল্প লিখেই সাহিত্যজগতে তার আত্মপ্রকাশ। দেশের উল্লেখযােগ্য প্রায় সব কাগজে বিরামহীন লিখে চলেছেন গল্প আর গল্প, সঙ্গে উপন্যাসও। যাপিত জীবনের সামান্য ঘটনাও শৈল্পিক বর্ণনা এবং বুনুন-নৈপুন্যের কারণে তার গল্পে অসামান্য মর্যাদা লাভ করে। যেমন গল্পে, তেমনি উপন্যাসেও তিনি এই দেশ এই সমাজ এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নানামুখী প্রেক্ষিত তুলে এনেছেন শৈল্পিক বুনুনে।
মুক্তিযুদ্ধ তার সাহিত্য সাধনার প্রিয় প্রসঙ্গ বলেই মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বহু গল্পে নানা মাত্রিক চরিত্রে উপস্থাপিত হয়েছে এবং উপন্যাসেও এসেছে নায়কোচিত উচ্চতা নিয়ে। বঙ্গবন্ধুবিষয়ক বারটি বাছাই করা গল্প নিয়ে সাজানাে হয়েছে অসামান্য গল্পগ্রন্থ 'অহংকারের উসহ হতে'।
সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি হিসেবে রফিকুর রশীদ এরই মাঝে অর্জন করেছেন এম. নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, অধ্যাপক খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অরণি সাহিত্য পুরস্কার, সিকান্দার আবু জাফর পুরস্কার ও পদক, কথাসাহিত্যকেন্দ্র সম্মাননা ও পদক, বগুড়া লেখকচক্র সম্মাননা, চন্দ্রাবতী একাডেমি সম্মাননা এবং কাজী কাদের নওয়াজ জন্মশতবর্ষ সম্মাননা প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য স্বীকৃতি।