বাংলা কবিতার চিরকালের আবেগময় রূপটিকে তুলে ধরে মহাদেব সাহা তাঁর কবিতাকে করে তোলেন সজীব আর হৃদয়গ্রাহী। এত যে সুখের নৃত্য, এত যে দুঃখের অশ্রু কাব্যগ্রন্েথর কবিতাগুলোতে তারই ধারাবাহিকতা। এসব কবিতায় বেজে ওঠে সুখ-দুঃখ-বেদনার সিম্ফনি, বিরহের বাঁশি আর জাগে প্রথম প্রেমের শিহরণ। গৃহে ফেরার আকুতি, নির্জন সবুজ মায়ার টান আর স্মৃতির কলকবজার মোহনীয় বিস্তারে তৈরি হয় এক অনির্বচনীয় স্মৃতিমেদুরতা। অন্যদিকে, মানুষের অপূর্ণতায় কবির বিষাদক্লিষ্ট স্বর ধ্বনিত হয় কবিতার বয়ানে, ‘এই আত্মার ক্রন্দন শোনো,/ লজ্জায় গ্লানিতে আমি কতকাল মুখ ঢেকে আছি,/ কতকাল দেখি না উজ্জ্বল ভোর, শিশির, সৌরভ,/ আমি নষ্ট ভ্রষ্ট ম্লান হয়ে গেছি, স্তব্ধ হয়ে গেছি।’ আবার মানুষে জয়গানে উচ্চকণ্ঠ কবি বলছেন, ‘আয়ত্ত করো পৃথিবীর জ্ঞান ও বিজ্ঞান/ প্রসারিত করো দৃষ্টি/ দ্যাখো নক্ষত্রলোকের অপার ঐশ্বর্যরাজি/ কেন পরাভূত হবে তুমি, ক্লান্ত হবে/ হতমান হবে?/ ওঠো, জাগো, জয় করো, জগৎ তোমার, তুমি/ ধরিত্রীপুত্র।’
মানুষের সুখ-দুঃখ, দয়া-ভালোবাসা-নিষ্ঠুরতা দিয়ে গাঁথা কবিতাগুলো পাঠকের হৃদয়কে নাড়া দেবে।
মহাদেব সাহা
জন্ম : শ্রাবণ ১৩৫১, শনিবার, ৫ আগস্ট, ১৯৪৪, সিরাজগঞ্জ জেলার ধানঘড়া গ্রামে।
পিতা : গদাধর সাহা, মাতা : বিরাজমােহিনী। ঢাকা কলেজ, বগুড়া কলেজ ও রাজশাহী বিশ্বাবিদ্যালয়ে অধ্যয়ন প্রথমে বাংলা ও পরে কিছুকাল ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র। লেখালেখির শুরু কৈশােরে। স্ত্রী : নীলা সাহা, দুইপুত্র : তীর্থ ও সৌধ।
গ্রন্থসংখ্যা : ১০৮ প্রথম কাব্যগ্রন্থ : এই গৃহ এই সন্ন্যাস। শিশু-কিশােরদের জন্য লেখা কবিতার বই : ৮, গদ্যগ্রন্থ : ১০ এ পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন : জার্মানি, রাশিয়া। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ভারত, উজবেকিস্থান, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা।
সাহিত্যের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন বহু পুরস্কার; একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার, বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার, কবি সুকান্ত সাহিত্য পুরস্কার, কপােতাক্ষ সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার, মনিসিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট সম্মাননা, সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার, কবিতালাপ পুরস্কার, রেখাচিত্রম সম্মাননা, কলকাতা, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, কলকাতা, বাংলাদেশ-কানাডা অ্যাসােশিয়েশন অব ক্যালগেরি সম্মাননা, সংহতি গুণীজন সম্মাননা পদক, লন্ডন, উত্তরা ইউনিভার্সিটি সম্মাননা।