বাংলাদেশের উৎসবগুলোর জাঁক-জমকতা শব্দ ও ছবিতে ধারণের একটি প্রচেষ্টা হচ্ছে এই প্রকাশনাটি। লেখাগুলোতে পাওয়া যাবে উৎসবগুলোর উৎস ও বিকাশ অর্থাৎ রূপান্তর, অন্যদিকে ছবিগুলোতে প্রকাশ ঘটেছে এগুলোর চমৎকারিত্ব ও বিশালতা এবং যে আবহে এগুলো অনুষ্ঠিত হয় সেই আবহ।। ধর্মনিরপেক্ষ উৎসবগুলোতে জড়ো হয় সব ধর্মের মানুষ এবং এখানে প্রতিফলন ঘটে তাদের আশা ও আকাক্সক্ষা। একইসঙ্গে, ধর্মীয় অধিকাংশ উৎসবগুলোও সম্প্রদায়ের বেড়াজাল ডিঙিয়ে সার্ব্বজনীন রূপ নেয়, পরিণত হয় মানুষের উৎসবে।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
শামসুজ্জামান খান
বাংলাদেশের অন্যতম লােকসাহিত্য গবেষক ও প্রাবন্ধিক শামসুজ্জামান খানের জন্ম ১৫ জুন ১৯৩৭। কৈশােরেই তাঁর সাহিত্যচর্চার সূত্রপাত। স্কুলে পড়াকালে যৌথ সম্পাদনায় বের করেন হাতে-লেখা সাহিত্যপত্রিকা ‘পূর্বাভাষ'। প্রথম লেখা ছাপা হয় দৈনিক আজাদের মুকুলের মহফিল-এ, ১৯৫৭ সালে। 'লাল শার্ট' শিরােনামের গল্পটির বিষয় ছিল ভাষা আন্দোলনের শহিদ রফিকের জীবন। ষাটের দশক থেকে কচিকাঁচার মেলার সংগঠক হিসেবে অজিত কুমার গুহ, সুফিয়া কামাল, আবদুল্লাহ আল-মুতী এবং রােকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের সঙ্গে সারা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন।
তার উল্লেখযােগ্য গ্রন্থের মধ্যে আছে-মাটি থেকে মহীরুহ, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলাপ ও প্রাসঙ্গিক কথকতা, কালের ধুলােয় স্বর্ণরেণু, বাংলার গণসংগীত, আধুনিক ফোকলাের চিন্তা, বর্ধমান হাউসে রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য প্রবন্ধ, সাম্প্রতিক ফোকলাের ভাবনা, বাংলা সন ও তার ঐতিহ্য ইত্যাদি। এ ছাড়াও শিশুসাহিত্যবিষয়ক অনেকগুলাে বই রয়েছে ।
তিনি ২০০১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮৭ ও ২০১২ সালে অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার পান। এর আগে ১৯৬৭ সালে শামসুজ্জামান খানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় কিশােরগল্প সংকলন 'সূর্যমুখী'। সংকলনটি তৎকালীন পূর্ববাংলার শিশুকিশাের সাহিত্যে একটি উল্লেখযােগ্য সংকলন হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ১৯৬৮ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ পুরস্কার অর্জন করে।
শিক্ষকতা দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু। ২০০৯ সাল থেকে তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। ২০১৭ সালে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হয়েছেন।
আনিসুজ্জামান
আনিসুজ্জামানের জন্ম ১৯৩৭ সালে কলকাতায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলায় বি এ অনার্স, এম এ ও পিএইচ ডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষকতা করেন দু-দফা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৯৫৯-৬৯ ও ১৯৮৫-২০০৩) এবং মধ্যবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবসর নেওয়ার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক ছিলেন, এখন এমেরিটাস অধ্যাপক।
তিনি শিকাগাে বিশ্ববিদ্যালয়ে পােস্ট-ডক্টরাল। ফেলাে এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে কমনওয়েলথ অ্যাকাডেমিক স্টাফ ফেলাে ছিলেন। পাঁচ বছর যুক্ত ছিলেন জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা-প্রকল্পে। কলকাতার মওলানা আবুল কালাম আজাদ। ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজ, প্যারিস। বিশ্ববিদ্যালয় এবং নর্থ ক্যারােলাইন স্টেট। ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং ফেলাে ছিলেন, বিশ্বভারতীতে ছিলেন ভিজিটিং প্রফেসর।
. বাংলা ও ইংরেজিতে তার অনেকগুলি বই। ঢাকা, কলকাতা, লন্ডন ও টোকিওতে প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে তাঁর রচিত মুসলিম-মানস ও বাংলা সাহিত্য, মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র, স্বরূপের সন্ধানে, পুরােনাে বাংলা গদ্য, বাঙালি। নারী সাহিত্যে ও সমাজে, তাঁর স্মৃতিকথা কাল নিরবধি ও আমার একাত্তর, Factory Correspondence and other Bengali Documents in the India Office Library and Records, Creativity, Reality and Identity, Cultural Pluralism, Identity, Religion and Recent Hisotry এবং তাঁর সম্পাদিত রবীন্দ্রনাথ ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস (প্রথম খণ্ড) বিশেষ উল্লেখযােগ্য। তিনি গবেষণায় বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার, শিক্ষায় রাষ্ট্রীয় সম্মান একুশে পদক এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রচারে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দিয়েছে। সরােজিনী বসু পদক, রবীন্দ্রভারতী দিয়েছে। সাম্মানিক ডি. লিট।