ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ গ্রামবাংলার অতি সাদারণ সহজ-সরল মানুসের মুখে মুখে প্রচলিত দাদা-দাদি, চাচা-চাচির মুখ থেকে বেরিয়ে আসা অকৃত্রিম ভালোবাসায় হৃদয়-নিংড়ানা লোককথা বা লোককাহিনীগুলোকেই অবিকল তুলে ধরা হয়েছে এ বইতে। এখানে স্থান পেয়েছে রূপের মনোহর, আয়নামতি, আলম সদাগর নামক তিনটি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর কাহিনী। এগুলোর কথক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার রসুলপুর গ্রামের গায়ক আব্দুল আজিজ নামক এক নিরক্ষর কৃষিকর্মী বা ক্ষেতমজুর। ৭৫ বছর বয়সেও যাঁর কণ্ঠ অত্যন্ত জোরালো ও সুরেলা প্রাণশক্তিময়। আধুনিক শহুরে ও নব্য গ্রাম্যসংস্কৃতির ভিড়ে এ মূল্যবান কাহিনীগুলোর আর তেমন একটা গীত হয় না। আমাদের অজান্তেই এগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। এগুলো রক্ষার দায়িত্ব সরলের। কারণ এগুলোই আমাদের আবহমান কালের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের খোরাক। নরসিংদী জেলার বটেশ্বর গ্রামের কৃতীসন্তান বহু গ্রন্থপ্রণেতা; ইতিহাস, লোকসাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষক বাংলা একাডেমীর সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রাপ্ত ব্যক্তি মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান এসব মূল্যবান লোককাহিনীগুলো অতি যত্নে সংগ্রহ ও রক্ষণের ব্যবস্থা করে জাতির জন্য বিরাট কাজ সম্পন্ন করেছেন। বিনোদনের পাশাপাশি এগুলো অতি যত্নে সংগ্রহ ও রক্ষণের ব্যবস্থা করে জাতির জন্য বিরাট কাজ সম্পন্ন করেছেন। বিরোদনের পাশাপাশি এগুলোর সাহিত্যগুণও অতি উচ্চ। এ বইটি সব বয়সের পাঠকের জন্য আনন্দদায়ক ও শিক্ষনীয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের কাহিনী হলেও এগুলোর আবেদন সার্বজনীন। শহর, গ্রাম-গঞ্জের সর্বত্র এসব লোককাহিনীর প্রচুর ভক্ত শ্রোতা রয়েছে এখনো। প্রত্যেক শিক্ষিত লোকেরই উচিত এসব মৌলিক বই বাড়িতে রাখা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে তুলে দেয়া। কারণ এসব গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণ করেই আমরা বাঙালি বলে অহংকার করি। এগুলোই আমাদের শেকড়ের সন্ধান দেয় চিরকাল। বাংলাদেশের লোককাহিনী ৩য় খণ্ড বইটি এক্ষেত্রে এক মূল্যবান সংযোজন হয়ে থাকবে। কারণ বাঙালি ভাষাভাষি প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের স্থান পাক এটাই কাম্য।
মো. বরকত উল্লাহ পাঠান
মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠান
জন্ম: ৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৯। নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বটেশ্বর গ্রাম। পিতা: মােহাম্মদ হানীফ পাঠান। মাতা: মেহেরুন্নেছা । স্ত্রী: সেলিনা বেগম। তিন কন্যা: ... পিতা মােহাম্মদ হানীফ পাঠান ছিলেন একাধারে প্রখ্যাত লােকসাহিত্য সংগ্রাহক, গবেষক, প্রত্নতত্ত্ববিদ, মূল্যবান প্রাচীন নিদর্শন সংগ্রাহক, শিক্ষাবিদ, গণিতবিদ, ভাষাসৈনিক, বৃটিশ ও জমিদার বিরােধী আন্দোলনকারী, সুবক্তা ও একজন সফল কৃষক। পিতার প্রায় সব গুণই সুযােগ্য পুত্র হাবিবুল্লা পাঠান এর মধ্যেও বিরাজমান। বিশেষত লােকসাহিত্য ও প্রত্নতত্ত্বে পিতাকেও যেন ছাড়িয়ে গেছেন পুত্র। তার অক্লান্ত ও বিরামহীন প্রচেষ্টায়। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক দিক থেকে ওয়ারী ও বটেশ্বর গ্রাম দুটি আজ সারা বাংলাদেশে, এমনকি সারা বিশ্বে পরিচিত। ওয়ারী-বটেশ্বর আজ ইতিহাসেরই অংশ। এখানে পাওয়া গেছে সাড়ে তিন হাজার বছরের প্রাচীন...বসতি পাওয়া গেছে মূল্যবান নকশি পাথরের গুটিকা। এসবই তাঁর গবেষণালব্ধ কর্ম। সম্পূর্ণ নিজ খরচে বটেশ্বর গ্রামে নিজবাড়িতে গড়ে তুলেছে, বটেশ্বর জাদুঘর’ বা প্রত্বসংগ্রহশালা। লােক সাহিত্যের নানা উপাদান ও উপকরণ সংগ্রহে হাবিবুল্লাহ পাঠানের রয়েছে অসাধারণ সাফল্য। একটি বইয়ের তথ্য ও উপাদান সংগ্রহ করেছেন একটানা ৩৫ বছর। বেরিয়েছে ৩টি খণ্ডে লােককাহিনী। বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন আকাশবাণীসহ বাংলাদেশের সব সরকারী-বেসরকারী বেতারটেলিভিশন ও সংবাদপত্রে তাঁর জীবন ও কর্মবিষয়ক বহু সাক্ষাৎকার ও ফিচার প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে। হাবিবুল্লা পাঠানের প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ: নরসিংদীর কবি সাহিত্যিক (১৯৮৬), নরসিংদীর লৌকিক খেলাধুলা (১৯৮৮) বাংলা একাডেমী প্রকাশিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ওয়ারী বটেশ্বর (১৯৮৯), বাংলাদেশের লােককাহিনী (১ম খণ্ড নরসিংদী- ১৯৯৬) , বাংলাদেশের লােককাহিনী (২য় খও নেত্রকোনা- ১৯৯৭), বাংলাদেশের লােককাহিনী (৩য় খণ্ড বি. বাড়িয়া- ১৯৯৮), নরসিংদী গাজীপুরের লােকঐতিহ্য : বিবাহ ও মেয়েলী ছড়াগীত (২০০০)