গল্প ১০১এর সম্পর্কিত কিছু কথা এ কথা আজ বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সত্যজিতের প্রধান সৃষ্টির জগৎ চলচ্চিত্রের জগৎ । এখানে তাঁর সিদ্ধি বিশ্বমানের এবং আবিস্মরণীয়। এমন একজন স্রষ্টা যখন সাহিত্যসৃষ্টিতেও শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠেন, তখন আমাদের বিস্ময়ের অন্ত থাকে না। আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে লক্ষ করি সিনেমার সঙ্গে তিনি সাহিত্যভাবনাতেও ব্যাপ্ত হয়েছিলেন। মগ্ন হয়েছিলেন অন্য এক দিগন্ত রচনায়। বাংলা দেশের এক সম্মানিত সাহিত্যভবন ও সাহিত্যপরিবারের ঐতিহ্য ছিল সত্যজিতের রক্তে। এর সঙ্গে মিশে গিয়েছিল তাঁর প্রতিভা, মেধা, ব্যক্তিস্বতন্ত্র্য, কল্পনা, উদ্ভাবনী মন আর অকৃত্রিম গদ্যশৈলী। গল্প রচনার সূচনালগ্ন থেকেই সত্যজিৎ পাঠকের মন জয় করে নিয়েছিলেন। শুরু থেকেই তিনি লিখেছেন গল্পের মধ্যে জমাটি গল্প। এদিক থেকে বোধ হয় তিনি স্যার ফিলিপ সিডনির তত্ত্বে বিশ্বাসী। সর্বপ্রথমে যা গল্প, সব শেষেও তা গল্প। কোনও জটিল তত্ত্ব নয়, ছোটগল্পে তিনি খুঁজে নিয়েছেন মুক্তি ও বিস্ময়। সুধী সমালোচকের ভাষায়, “আমাদের খণ্ডিত অস্তিত্বের সমস্যাসন্ধুল জগৎটা সেখানে মাথা চাড়া দেয় না। তার বদলে পাই মহাকাশের সংকেত, অতল সমুদ্রের ডাক, মরু বা মেরুর ইশারা অথবা মানুষের, একান্তই ছাপোষা সাধারণ মানুষের অশেষত্বের ঠিকানা। প্রযুক্তি পারঙ্গম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে যে-মানুষের গল্প তিনি শোনান সে-মানুষ গাণিতিক সিদ্ধির জগতে গণিতের অতীত মানুষ।” জগৎ ও জীবনকে সত্যজিৎ এমনই শিল্পীস্বভাবে দেখেছেন আগাগোড়া। ফলে তাঁর গল্পের কিশোরপাঠ্য ও বয়স্কপাঠ্যের বিভাজন রেখা মুছে গেছে। অনায়াসে। সব বয়সী পাঠককে তাঁর গল্পের জগতে সত্যজিৎ টেনে আনতে পেরেছেন। এই সিদ্ধি ও কৃতিত্ব খুব কম সংখ্যক গল্প-লেখকেরই আছে। সময়জয়ী এই গল্পগুলি যে-ভাষায় সত্যজিৎ লিখেছেন তা একান্তভাবে তাঁর নিজের ভাষা। তাঁর গদ্যশৈলী অননুকরণীয়। “এ গদ্যে কোথাও ফেনা নেই। পাতাবাহার নেই। নিম্পত্র অথচ ফলবতী লতার মতো মনোজ্ঞ সে গদ্য।” আবার শব্দ দিয়ে তৈরি করেছেন ছবি। প্রয়োজন মতো সে-ছবিতে রং ধরিয়ে চাক্ষুষ করেও তুলেছেন। সত্যজিতের আশিতম জন্মবর্ষপূর্তিতে শঙ্কু ও ফেলুদার কাহিনীগুলি বাদ দিয়ে তাঁর সমস্ত গল্প, দুটি উপন্যাস ও একটি নাট্যকাহিনী নিয়ে একত্রে প্রকাশিত হল ‘গল্প ১০১’ ।
’গল্প ১০১’ -এর সূচিপত্র : পুরস্কার * বৰ্ণান্ধ * বন্ধুবাবুর বন্ধু * টেরোড্যাকটিলের ডিম * সেপ্টোপাসের খিদে * সদানন্দের খুদে জগৎ * অনাথবাবুর ভয় * দুই ম্যাজিশিয়ান * শিবু আর রাক্ষসের কথা * পটলবাবু ফিল্মস্টার * বিপিন চৌধুরীর স্মৃতিভ্ৰম * বাদুড় বিভীষিকা * নীল আতঙ্ক * রতনবাবু আর সেই লোকটা * ফ্রিৎস * ব্ৰাউন সাহেবের বাড়ি * প্রোফেসর হিজিবিজবিজ * বাতিকবাবুল * খগম * বারীন ভৌমিকের ব্যারাম * ফটিকচাঁদ * বিষষ্ণুল * অসমঞ্জবাবুর কুকুর * লোডশেডিং * ক্লাস ফেন্ড * সহদেববাবুর পোট্রেট * মিঃ শাসমলের শেষরাত্রি * পিন্টুর দাদু * বৃহচ্চঞ্চু * চিলেকোঠা * ভূতো * অতিথি * ম্যাকেঞ্জি ফুট * ফাস্ট ক্লাস কামরা * ডুমনিগড়ের মানুষখেকো * ধাপ্পা * কনওয়ে কাসলের প্রেতাত্মা * অঙ্ক স্যার, গোলাপীবাবু আর টিপু * শেঠ গঙ্গারামের ধনদৌলত * স্পটলাইট * তারিণী:খুড়ো ও বেতাল * বহুরূপী * মানপত্র * অপদাৰ্থ * সাধনবাবুর সন্দেহ * গগন চৌধুরীর স্টুডিও * লখনৌর ডুয়েল * ধুমলগড়ের হাণ্টিং লাজ * লাখপতি * খেলোয়াড় তারিণী:খুড়ো * টলিউডে তারিণী:খুড়ো * আমি ভূত * রামধনের বাঁশি * জুটি * মাস্টার অংশুমান * নিধিরামের ইচ্ছাপূরণ * কানাইয়ের কথা * রতন আর লক্ষ্মী * গঙ্গারামের কপাল * সুজন হরবোল * নিতাই ও মহাপুরুষ * মহারাজা তারিণী:খুড়ো * হাউই * প্রতিকৃতি * তারিণী:খুড়ো ও ঐন্দ্রজালিক * অনূকূল * কাগ্যতাডুয়া * নরিস সাহেবের বাংলো * কুটুম-কাঁটাম * টেলিফোন * গণেশ মুৎসুদ্দির পোস্ট্রেট * মৃগাঙ্কবাবুর ঘটনা * নতুন বন্ধু * শিশু সাহিত্যিক * মহিম সান্যালের ঘটনা * গণৎকার তারিণী:খুড়ো * গল্পবলিয়ে তারিণী:খুড়ো * নিতাইবাবুর ময়না * রন্টুর দাদু * সহযাত্রী * ব্রজবুড়ো * দুই বন্ধু * শিল্পী * অক্ষয়বাবুর শিক্ষা * প্ৰসন্ন স্যার * অভিরাম * অনুবাদ * ব্লু-জন গহ্বরের বিভীষিকা * মোল্লা নাসিরুদিনের গল্প * মোল্ল নাসিরুদিনের আরো গল্প * মোল্লা নাসিরুদিনের আরো গল্প * আবার মোল্লা নাসিরুদিন * আর এক দফা মোল্লা নাসিরুদিন * ব্ৰেজিলের কালো বাঘ * মঙ্গলই স্বৰ্গ * ঈশ্বরের ন’ লক্ষ কোটি নাম * ইহুদির কবচ * পিকুর ডায়রি ও অন্যান্য * ময়ুরকাঠি জোলি * সবুজ মানুষ * আর্যশেখরের জন্ম ও মৃত্যু * পিকুর ডায়ারি
সত্যজিৎ রায়
চিত্রশিল্পী সংগীতগুণী প্রচারবি বাগ্মী এবং বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায়ই সমান দক্ষ লেখক সত্যজিৎ রায়ের প্রধান পরিচয়, ভারতীয় চলচ্চিত্রের মুক্তিদাতা তিনি। আর তাঁর চিত্রের মুক্তি ভারতীয় সংস্কৃতি-সরণীর এক-একটি মাইলস্টোন, বিশ্বের মানচিত্রেও সগর্ব অধ্যায়। সাধনা তাঁর নিষ্ঠাবান, যাত্রা তাঁর নিঃসঙ্গ, শিল্পরুচি সৃষ্টিতে যিনি নিজেকেই অতিক্রম করেছেন। সেই চলচ্চিত্রনির্মাণে চিত্রনাট্য-সংলাপ-রূপসজ্জা থেকে শুরু করে। সম্পাদনা-বিজ্ঞাপন-প্রচারে সত্যজিৎ রায় স্বয়ং সম্পূর্ণ। তাঁর সেই দৃষ্টি এবং অভিজ্ঞতার সমাহার ঘটেছে এই গ্রন্থের রচনাবলীতে : চলচ্চিত্রের সমালােচনা রয়েছে, রয়েছে সংগীতের ব্যবহার বা সম্পাদনার পদ্ধতি এমনকি চিত্রকেন্দ্রিক বিষগ্ন মধুর স্মৃতিচর্যা। স্বচ্ছ ভাবনার দীপ্তিমান প্রকাশে এই গ্রন্থ চলচ্চিত্র-জিজ্ঞাসু তথা যে-কোনাে শিল্পপ্রেমী বাংলাভাষীর অবশ্যপাঠ্য হয়ে উঠেছে।