আমি অফ লাইসেন্স সপে ডিউটি পালন করছি। একজন অন্ধ লোক দোকানে প্রবেশ করলেন। লোককে গাইড দিচ্ছে কালো রঙের কুকুর। এই কুকুরটাকে বিশেষ ধরনের একটা কোর্স করানো হয়েছে। রাস্তা পারাপার ও চলাচল। গাড়িতে উঠানামা, দোকানে সপিং করা সম্পর্কে। আমি এই কুকুরটিকে দেখে খুব বিস্মিত হলাম।
আমি ভেগেনহামে যে বাসায় থাকি সে বাসায় আমার রুমের সাথে একটা আপেল গাছ রয়েছে। গাছটি ঝুপড়ির মতো দেখতে। রাতে প্রায় জানালা খুলে দিয়ে আপেল গাছ দেখি। হ্যান্ড রোলিং সিগারেট টানি।
একদিন লক্ষ করলাম, আপেল গাছে একটি কাঠ বিড়ালি থাকে। গাছের ডালপালায় লাফিয়ে বেড়ায়। পশ্চিমাদের ভাবের হাওয়া আমার শরীরেও লাগল। কারণ আমার সাথে কাঠ বিড়ালির একটা বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠল। আমি যখন কাঠ বিড়ালির দিকে তাকিয়ে থাকি তখন কোন এক বিচিত্র কারণে কাঠ বিড়ালিও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
আমাদের মধ্যে কিছু কথাবার্তাও হয়।
যেমন-
আমি ঃ খবর কী রে?
কাঠ বিড়ালী : চুচু (ভালো)
আমি ঃ আপেল খেয়েছিস?
কাঠ বিড়ালী ঃ চুচু (খেয়েছি)
আমি ঃ শীত লাগে?
কাঠ বিড়ালী ঃ চুচু (লাগে, একটু একটু)
আপেল গাছটিও আমাকে বেশ ভাবায়। আমার চিন্তা শক্তি প্রসারিত করে। রহস্যময় জগতে আপেলে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। যেমন ঋ = গঅ এসেছে আপেলকে কেন্দ্র করেই।
প্রাচীন চিত্রকলায় আদম, ইভ এবং সর্পের সঙ্গে যে ফলটি দেখা যায় তার নাম আপেল।
অ্যাপল নিয়ে আর মাতামাতি করলাম না। ভেগেনহাম সম্পর্কে ধারণা নিতে শুরু করলাম। তেমন কিছুই পেলাম না। শুধু একজন বৃদ্ধ মাতালকে চোখে পড়ে। বৃদ্ধের বয়স পঁচাশি কী নব্বই হবে। সব সময় মদ খায়। ড্রাঙ্ক হয়ে সন্ধ্যা বেলায় মাতলামি করে। প্রতি সন্ধ্যাতেই দেখি কারো না কারো সাথে মাতলামি করছে। হয়তবা সে আর জীবনের বাকি সময় পার করবে কিভাবে ভেবে পায় না। তাই এই মাতলামি। পশ্চিমাদের তো আর আমাদের মত চিন্তা নেই যে, ব্যাংক ব্যালেন্স করতে হবে। বৃদ্ধ বয়সে ভরণপোষণ করবে কে? তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা আছে।
বৃদ্ধ ভাতা, বেকার ভাতা, আরও কত ধরনের ভাতা, তবুও তারা ভাতা নিতে রাজি না। হোয়াইট চ্যাপল একজন বৃদ্ধকে দেখতাম তিনি ফুল বিক্রি করেন।
বৃদ্ধের বয়স নব্বই এর কাছাকাছি।
একদিন তাকে বললাম, তুমি ফুল বিক্রি কর কেন? এখন তোমার বিশ্রাম নেওয়া দরকার। সরকার তোমাকে ভাতা দেয় না?
ওল্ড ম্যান আমাকে রাগ করে বলল,
আমি কেন দেশের ঘাড়ে বসে খাব?
আমি কী পরিশ্রম করে উপার্জন করতে জানি না। যা হোক মূল গল্পে ফিরে আসি।
বৃদ্ধ মাতাল একদিন আমাকে পেয়ে বসলেন। সন্ধ্যা বেলায় হাঁটছি হঠাৎ আমার কাছে এগিয়ে এলো।
প্রথমেই তার জেকেটের পকেট থেকে হুইস্কি বের করে দিলেন। বললাম, এই সব পান করি না। সে কারণ জিজ্ঞেস করল। বললাম, আমি মুসলিম। মুসলমান ধর্মে মদ খাওয়া নিষেধ। হুইস্কির বোতল জেকেটের পকেটে ঢুকালো। আমার সাথে গল্প শুরু করল। পড়াশুনা, দেশ, তার স্ত্রী, ছেলে মেয়ে নিয়ে। সবশেষে ভেগেনহাম সম্পর্কে পরিচয় করে দিলো।
বলল, এখানে অনেক বিখ্যাত একজন বাস করতেন। তার নাম আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। তিনি পেনিসিলিন আবিষ্কার করেছেন। যখন বৃদ্ধের কাছ থেকে বিদায় নিলাম তখন সে অন্য পকেট থেকে একটা আপেল বের করে দিলো। অভিভ‚ত হলাম। অনেক শিক্ষা দেওয়ার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।
স্যার আইজাক নিউটনের দেশ, আলেকজেন্ডার ফ্লেমিং এর দেশ, শেক্স পিয়ারের দেশ, অচীন আপেলের দেশ ইংল্যান্ড।
নিশো আল মামুন
জামালপুর, বকশীগঞ্জ- এ ১৯৮৬ সালে নিশো আল মামুন জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোঃ শাহজামাল (যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ১১ নং সেক্টর) এবং মা সুলতানা রাজিয়া। তিনি বাবা-মায়ের কনিষ্ঠ পুত্র। শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্ট্র্যাটিজিক ম্যানেজমেন্ট এর উপর পোস্ট গ্রাজুয়েট, ইউ. কে। কলেজ জীবন থেকেই মেতে উঠেন গ্রুপ থিয়েটার নিয়ে। অমিমাংসীত সমাপ্তি (প্রকাশ কাল ২০১২ সাল) উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তার সাহিত্যে আতœ প্রকাশ। তিনি ২০১৬ সালে আমরা কুঁড়ি (জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন) সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। নিশো আল মামুন এর প্রকাশিত গ্রন্থের মাঝে রয়েছে অমিমাংসীত সমাপ্তি, ভোরের ঝরা ফুল, জোৎস্নার বিয়ে, নিখিলের নায়ক, বসন্ত দুপুরের নীল আকাশ, নীল আকাশের নীচে, গৃহত্যাগী জোছনা।