জোয়ান অব আর্ক
অনেক ভালো লাগলো বইটি পড়ে। শেষদিকটায় খারাপ লেগেছে, কারণ যে কিনা সবার জন্য যুদ্ধ করলো তাকেই আগুনে পুরে মারা হলো। তখন তার মাত্র ১৯ বছর বয়স ছিল। ফরাসী বীরকন্যা 'জোয়ান অব আর্ক' এর বীরত্বগাঁথা। একটি মেয়ে ঘোড়ায় চেপে যাচ্ছে এটাকে সহজে কি মানা যায়? ..... এবার জোয়ান বাস্তবের মুখোমুখি। প্রথম সমস্যা, কী জামাকাপড় পরবে? দখলদার বাহিনীর হাতে বিপর্যস্ত একটি দেশে একটি মেয়ে ঘোড়ায় চেপে যাচ্ছে, এটা তো রীতিমত আতঙ্কের ঘটনা। আর সে যদি সেপাই-শাস্ত্রী নিয়ে যুদ্ধে যায়, তবে তো তাকে পুরুষের পোশাকই পরতে হবে। ভোকুলের লোকজন নিজেদের থেকেই এগিয়ে এল, ওপরে ও নিচে পরিধান করার অন্তর্বাস, ভারি বুট জুতা, কুঠার এইসব তারাই উপহার দিল। সুন্দর একটা ঘোড়াও জোয়ান তাদের কাছ থেকেই পেল। গভর্নর রোবেয়ার দু বোড্রিকুর দিলেন একটি তলোয়ার। জোয়ানকে চেনাই যায় না যেন। বাকিটাও জোয়ান নিজেই করল, পিঠের উপর ছড়ানো ঘন দীঘলকেশ নিজের হাতেই কচকচ করে কেটে ফেলল। বাহ্ এবারে তো জোয়ানের যুদ্ধের সাজ শেষ হলো... রূপকথার মতো তার জীবন। অনুকরণযোগ্য তার দেশপ্রেম এবং উদ্যম। তার সততা দৃষ্টান্তযোগ্য। ঘোড়ায় চড়তে জানতেন না, যুদ্ধ করলেও যুদ্ধের নিয়মকানুন কিছুই জানতেন না। অথচ তাকে দেখলেই সৈন্যরা সাহসী হয়ে উঠত। দুর্জয় সাহসী, গভীর দেশপ্রেমের অধিকারী, নির্ভীক চিত্তের জোয়ান অব আর্ক যুদ্ধক্ষেত্রেও করুণার প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছিলেন। তার মৃত্যু ফরাসিদের মনে নতুন চেতনা, নতুন উদ্দীপনা এনে দেয়। ফ্রান্সে ইংরেজদের অবরোধের চিহ্নই তারা মুছে ফেলে। ৩০ শে মে ফরাসী বীরকন্যা জোয়ান অব আর্কের ৫৭৯ তম মৃত্যবার্ষিকী (১৪১২-১৪৩১)। পূর্ব ফ্রান্সের একটি সামান্য কৃষকের ঘরে জন্মানো জোয়ান ফরাসী সেনাবাহিনীর জন্য বিরল যুদ্ধজয় এনে দিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই ফ্রান্স জিতে নেয় তাদের বেহাত হয়ে যাওয়া ভূমি। অনেকের ধারনা জোয়ানের ভবিষ্যত দেখার ঐশ্বরিক ক্ষমতা ছিল। তিনি সপ্তম চার্লসের ক্ষমতারোহনের পেছনেও পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছিলেন। দেশের এত গৌরব বয়ে আনা সত্বেও তাকে বার্গুনডিয়ানরা আটক করে ইংরেজদের কাছে বিক্রি করে দেয়। সেখানে একটি খৃষ্টান আদালতের রায়ে তাকে পুড়িয়ে মারা হয়। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৯।