মহল্লার সবচেয়ে ডানপিটে ছেলে ছিল জহির। পড়াশুনায় তেমন ভালো ছিল না। কিন্তু প্রতিবছর ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দু-চারটা পদক যেন ওর জন্যেই বরাদ্দ। ক্লাস এইটে পড়ার সময় হঠাৎ জানা গেল জহিরের মাকে চিকিৎসার জন্যে মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এরপরে স্কুলে ওর বন্ধুর সংখ্যা কমে গেল ঠিকই কিন্তু দুরন্ত স্বভাবটা গেল না। রফিক সেই হাতেগোনা কয়েক বন্ধুর মধ্যে একজন। এসএসসি পাশের পরে জহিরের সাথে মাকে দেখতে একবার পাবনা গিয়েছিল রফিক। ওদেরকে তিনি চিনতে পারেননি। সেই রাত্রে দু’বন্ধু স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে গলা জড়াজড়ি করে কেঁদেছিল।
সেই রাত্রে ওরা অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল।
কৈশোর পেরোনো তারুণ্য মানুষের জীবনে এক আশ্চর্য সময়। একদিকে পড়ালেখা, কেরিয়ার চিন্তা, ইগো অন্যদিকে বনজোছনার মতো বাঁধ ভাঙা প্রেম। কখনো দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নিস্ফল আক্রোশ। কখনো একা বাঁচতে শেখার অভিমান। কখনো হারজিতের মাঝে কিছু না বলা কথার প্রতিশোধ।
সেইসব কয়েকজন একা হৃদয়ের জলছবি এক মলাটে।
শফিকুর রহমান শান্তনু
আমি শফিকুর রহমান শান্তনু। মা সাহিদা রহমান, বাবা মােঃ শামসুর রহমান খান। কাস এইটে পড়ার সময় অংক পরীক্ষায় একবার ১০০ তে ১২ পেয়েছিলাম। সেই দুঃখে সারারাত জেগে একটা গল্প লিখে ফেললাম। এক কিশাের বাড়ি থেকে পালিয়ে রেলস্টেশনে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এই হল গল্পের বিষয়। সেই থেকে শুরু। বাবা মা থেকে স্কুল শিক্ষক ও বন্ধুদের পিঠ চাপড়ে দেয়া লাই আমার এইম ইন লাইফ’ তৈরিতে সাহায্য করেছে। প্রেমের প্রস্তাব না পেলেও লেখার প্রস্তাব পেয়েছি কিছু তাই এনটিভিতে প্রচারিত ভালােবাসার উল্টো পিঠ, টার্মিনাল, সম্রাট, বাংলাভিশনের বাতিঘর, গপ্পো, পাল্টা হাওয়া, আরটিভির ধানশালিকের গাঁও, এটিএনবাংলার ছলে বলে কৌশলে, সােনার শেকল, বৈশাখীটিভির তখন হেমন্ত, একুশেটিভির থ্রি কমরেডস সহ টেলিভিশনের জন্যে প্রায় দুশাে নাটক, পত্রিকায় দুচারটা গল্প ও ব্যান্ডসঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু, এসআই টুটুলসহ অনেকের গান লিখে আমি যখন লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিলাম, আমার বাবা ছাড়া পরিবারের কেউই বিষয়টাকে ভালাে চোখে নিল না! সেদিনই আমি প্রথম বুঝলাম, আজ কারাে চোখে যা ভালাে, কাল তারই চোখে তা খারাপ হতে পারে! শুনেছি, লেখক হলে বড় বড় কথা বলতে হয়। এখানেও আমি ধরা! বড় কথা বলতে গেলে সব কেমন যেন জট পাকিয়ে যায়। তখন মনে হয়, এই রাস্তা আমার নয়। আমার রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে।