“মানব জমিন” বইয়ের ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ কথা: আছে শুধু বড়-মাপের উপন্যাস নয় ‘মানবজমিন', প্রকারেও ব্যাপ্ত, বিশাল, বৈচিত্র্যময় । এ-যুগের অন্যতম শক্তিমান কথাকার শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের এ-যাবৎকাল প্রকাশিত যাবতীয় প্রধান রচনার প্রবল এক প্রতিস্পধী এই মহান উপন্যাস, আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের তাবৎ স্মরণীয় কীর্তিমালারও । ঐতিহ্যের সঙ্গে শিকড়ের যোগ এই দুর্লভ সৃষ্টির, সাম্প্রতিকের সঙ্গে আত্মার, আগামীর দিকে বাড়ানো এর কুঁড়ি-ধরানো ডালপালা । অসংখ্য ঘটনা, অজস্র চরিত্র, অফুরান সমস্যা এই উপন্যাসে। তবু কোথাও জট পাকায়নি। পরিণত লেখকের দক্ষ হাতের সুঠাম নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি চরিত্র ও কাহিনী সুস্থির, স্বতন্ত্র, লক্ষ্যাভিমুখী । লোভ, ঘূণা, প্ৰেম, রিপুর তাড়না, বাঁচার ইচ্ছে, উচ্চাকাঙক্ষা-এমন যে-সব কিছুর দ্বারা কুন্তীপাকে নিয়ত সিদ্ধ হচ্ছে মানুষ, তারই উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এই উপন্যাস । গড়ে উঠেছে মানুষে-মানুষে সম্পর্কের ভাঙচুর ও জোড়-মেলানো নিয়ে । অসংখ্য চরিত্রের ঘাত-প্ৰতিঘাতে দ্বন্দ্বময় এই উপন্যাসের অন্যতম নায়ক দীপনাথ, যাবতীয় চরিত্রের মধ্যে এক সাধারণ যোগসূত্রের মতো যে কিনা অবর্তিত, যার লড়াই চলেছে কর্মক্ষেত্রে । এক সওদাগরি আপিসের বিগ বসের পি. এ. দীপনাথ, আসলে এক বেতনভোগী ভূত্য । এই দীপনাথের সঙ্গেই তার বসের বউ মণিদীপার এক বিচিত্র সম্পর্ক গড়ে উঠল। আপাতভাবে রাগের, কিন্তু অন্তঃশীল অনুরাগের। বাস তাকে বিয়ে করার প্রস্তাবও দিয়েছিল। কিন্তু দীপনাথ কি সে-প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারবে ? এ-উপন্যাসের আরেকটি প্রধান চরিত্র তৃষা । মৃত ভাসুর তৃষাকে সব সম্পত্তি লিখে দিয়ে গেছে। লোকে বলে, তৃষার একমাত্র পুত্রের জনক তার ভাসুর। এমন-কি তুষার স্বামীও । তৃষার বিরুদ্ধে তাই স্বামীর লড়াই । দুরারোগ্য ব্যাধির বিরুন্ধে যার প্রতিমুহূর্তের একলা যুদ্ধ, সেই গ্ৰীতম, দীপনাথের ভগ্নীপতি, এ-উপন্যাসের আরেক প্রধান চরিত্র। প্ৰীতমের স্ত্রী স্বামীর প্রতি সেবাপরায়ণা, কিন্তু আগে থেকেই অরুণ নামে এক যুবকের সঙ্গে তার সম্পর্ক। মুখ্যত এই তিন চরিত্রের লড়াই “মানবজমিন' । আর লড়াইয়ের অবসানে তিন রকমের যে-পরিণতি, তার মধ্যেই ফুটে উঠেছে অসামান্য এই উপন্যাসের অমোঘ সেই বাতা, মানবজমিনে যা করতে শেখায় নতুন আবাদ, ভালবাসা ও বিশ্বস্ততার সোনা-ফলানো আবাদ ।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
জন্ম : ২ নভেম্বর, ১৯৩৫। দেশ—ঢাকা জেলার বিক্রমপুর । শৈশব কেটেছে নানা জায়গায় । পিতা রেলের চাকুরে। সেই সূত্রে এক যাযাবর জীবন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতায়। এরপর বিহার, উত্তরবাংলা, পূর্ববাংলা, আসাম । শৈশবের স্মৃতি ঘুরেফিরে নানা রচনায় উঁকি মেরেছে। পঞ্চাশ দশকের গােড়ায় কুচবিহার । মিশনারি স্কুল ও বাের্ডিং-এর জীবন । ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আই-এ | কলকাতার কলেজ থেকে বি এ । স্নাতকোত্তর পড়াশুনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্কুল-শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবনের শুরু | এখন বৃত্তি— সাংবাদিকতা । আনন্দবাজার পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত। প্রথম গল্প— দেশ পত্রিকায়। প্রথম উপন্যাস— ‘ঘুণপােকা’ । প্রথম কিশাের উপন্যাস—‘মনােজদের অদ্ভুত বাড়ি। কিশাের সাহিত্যে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিরূপে ১৯৮৫ সালে পেয়েছেন বিদ্যাসাগর পুরস্কার। এর আগে পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার।