ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ মেঘ বলেছে যাবো।আকাশের মেঘেরা কি কথা বলে? তারা কি যেতে চায় কোথাও? তারা কোথায় যেতে চায়? বর্ষান ঘন কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে চিত্রলেখার হঠাৎ এই কথা মনে হল। দশ-বার বছরের কিশোরীর মনে এর রকম একটা চিন্তা আসতে পারে, চিত্রলেখার বয়স পঁচিশ। এ রকম উদ্ভট তার জন্যে স্বাভাবিক নয়। তবুও কেন জানি নিজেকে তার মেঘের মতো মনে হয়। তার কোথায় জানি যেতে ইচ্ছা করে। এ রকম ইচ্ছা তো সব মানুষেরই কবে। সব মানুষের ভেতরই কি তাহলে এক টুকরা মেঘ ঢুকে আছে, যে কেবলি কোথাও যেতে চায়?
ভূমিকা অনেকদিন থেকে লেখালেখি করতে পারছিলাম না। কাগজ-কলম নিয়ে বসি-ঘন্টাখানিক পার হয় উঠে আসি। কাগজে নানাবিধ চিত্রকলা দেখা যায়। সেইসব চিত্রকর্ম দেখে আমার পুত্র নুহাশ খুব আহ্লাদিত হলেও অন্যরা আমার দিকে কেমন কেমন করে যেন তাকায়। এক সময় লিখতে শুরু করলাম। খুবই অনাগ্রহ দিনে লেখা। যেন আনন্দময় লেখা নয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেবার জন্যে টার্ম পেপার তৈরি করছি। লেখাটা এগোতে লাগল একটু অদ্ভুত ভঙ্গিতে, সবাই প্রথম চ্যাপ্টার লিখে দ্বিতীয় চ্যাপ্টার লেখে তারপর যায় তৃতীয়তে। আমি শুরু করলাম উল্টো দিকে। প্রথম যে চ্যাপ্টারটা লেখা হল-এক সময় সেটা হয়ে গেল সপ্তম চ্যাপ্টার। যা শুরু হল আমাদের ময়মনহিংহের ভাষায় তাকে বলে-“বেরাছেড়া”। এক সময় সেই বেরাছেড়ার সমাপ্তি হল। প্রকাশক বন্ধু আলমগীর রহমান খুশি মনে পাণ্ডুলিপি ছাপতে নিয়ে গেলেন। লেখা কম্পোজ এবং প্রুফ দেখা শেষ হবার পর যখন ছাপা শুরু হবে তখন আমি তাঁকে বললাম- কয়েকটা নাম পাল্টে দিতে হবে। নামগুলো উপন্যাসের চরিত্রগুলোর সঙ্গে যাচ্ছে না। তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন। সঙ্গত যুক্তি দেখালেন-নামের সঙ্গে চরিত্রের সম্পর্ক কী? একই নাম অথচ চরিত্রের আকাশ-পাতাল পার্থক্য তো সব সময় দেখা যায়। অকাট্য যুক্তি-কিন্তু লেখালেখির জগৎটা হিমুর জগতের মতো যেখানে যুক্তি সব সময় খাটে না। নাম পাল্টানো হল। তখন আমি বললাম, বইয়ের নামও আমি পাল্টেছি। তিনি দ্বিতীয়বার মাথায় হত দিয়ে বসে পড়লেন। কারণ প্রচ্ছদ হয়ে গেছে। আবার নতুন নামে প্রচ্ছদ হল। বই বের হয়ে গেছে। এখন আমার বইয়ের বর্তমান নামটাও পছন্দ হচ্ছে না। মনে হচেছ আগের নামটাই ভালো ছিল। তারচেয়েও মজার ব্যাপার-চরিত্রগুলোর আগে যে নাম ছিল এখন মনে হচেছ সেই নামগুলোই ঠিক ছিল। হুমায়ূন আহমেদ ৩১ জানুয়ারি’ ৯৭
হুমায়ূন আহমেদ
পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু খারাপ বাবা একটাও নেই।'
হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের প্রবাদপ্রতিম জনপ্রিয় একজন ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় লেখক বলে গণ্য করা হয়। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৩ নভেম্বর, ১৯৪৮, নেত্রকোনা জেলায়। তার আত্মজীবনীতে নেত্রকোনার নানান কথা উঠে এসেছে। এমনকি সেখানে তিনি 'শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ' নামে একটি স্কুল ও প্রতিষ্ঠা করেছেন।
মারা গেছেন: ১৯ জুলাই, ২০১২, নিউ ইয়র্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সে সময়ে তিনি লিখেছিলেন 'নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ' এখানে তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সময় পাওয়া যায়। ' এখানে তার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সময় পাওয়া যায়।
সন্তান শীলা আহমেদ, নুহাশ হুমায়ূন, নোভা আহমেদ, বিপাশা আহমেদ, নিনিত আহমেদ, নিষাদ আহমেদ। নুহাশ হুমায়ুন একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার । তার উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল 'ইতি তোমারই ঢাকা', 'পেটকাটা ষ' ও 'মশারি'। ২০১৮ সালে 'ইতি তোমারই ঢাকা' নাটকটির মাধ্যমে বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে।
ভাইবোন: মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব, রুখসানা আহমেদ, সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শাহিদ। ভাইবোনদের মধ্যে প্রায় সবাই লেখক। মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন লেখক। আহসান হাবীব উম্মাদ নামক একটি বহুল প্রচারিত রম্য পত্রিকার সম্পাদক।
জনপ্রিয় উপন্যাসসমূহ:
বাদশাহ নমদার
শঙ্খনীল কারাগার
আগুনের পরশমনি
মেঘ বলেছে যাবো যাবো
বাদশাহ নামদার
অপেক্ষা
নন্দিত নরকে
এইসব দিনরাত্রি সহ আরো আরো অনেক। (যারা হুমায়ূন পাঠে ভীষণ ভীষণ আগ্রহী তারা আরো আরো বইয়ের নাম জানতে চাইলে বই বাজার ডট কমে খুজে দেখতে পারেন। তার সমস্ত বই আমাদের সাইটে পাবেন।) আপনার পড়া হুমায়ূনের বইয়ের নাম আমাদের জানান।
হুমায়ূন পাঠ আপনার সময়কে রাঙিয়ে তুলবে না শুধু, আপনার সময়কে আপনার কাছে নিয়ে আসবে, আপনাকে হাসিকান্নায় মাতিয়ে তুলবে। বই পড়ুন, বইয়ের সাথে থাকুন।