ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ মিসির আলির ক্লাসের বক্তৃতার অংশ ”একজন মানুষ সারাদিনে কতগুলি শব্দ ব্যবহার করে জান? ষোল হাজার শব্দ। একটা বিড়াল দিনে দশ বারোটার বেশি শব্দ করতে পারে না। যদিও তার মুল আবেগ মানুষের মতই। আমরা বিড়ালকে আবেগশূন্য প্রাণী মনে করি। কেন মনে করি জান? মনে করি কারণ বেচারার ভুরু নেই। তোমরা মনে রেখো আমরা এবং অনুভূতি প্রকাশের জন্যে সবসময় ভুরু ব্যবহার করি। এখন বলতো এই গ্রন্থের অতি বিখ্যাত এক মহিলার ভুরু নেই। তিনি তাঁর আবেগ বিড়ালের মতই প্রকাশ করতে পারেন না। বল তার নাম কি? “মোনালিসা!” ভাল করে ছবিটা দেখ। বিড়ালের মত আবেগশূন্য মোনালিসা কিন্তু পৃথিবীর মানুষদের আবেগ ধারণ করছে। কে হাত তুলব? তুমি? বল কি বলবে?
হুমায়ূন আহমেদ
কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ‘নন্দিত নরকের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ। এই উপন্যাসে নিম্নমধ্যবিত্ত এক পরিবারের যাপিত জীবনের আনন্দ-বেদনা, স্বপ্ন, মর্মান্তিক ট্রাজেডি মূর্ত হয়ে উঠেছে। নগরজীবনের পটভূমিতেই তাঁর অধিকাংশ উপন্যাস রচিত। তবে গ্রামীণ জীবনের চিত্রও গভীর মমতায় তুলে ধরেছেন এই কথাশিল্পী। এর উজ্জ্বল উদাহরণ অচিনপুর ফেরা মধ্যাহ্ন মুক্তিযুদ্ধ বারবার তাঁর লেখায় ফুঠে উঠেছে। এই কথার উজ্জ্বল স্বাক্ষর জোছনা ও জননীর গল্প ১৯৭১ আগুনের পরশমণি শ্যামল ছায়া নির্বাসন প্রভৃতি। উপন্যাস গৌরীপুর জংশন যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ চাঁদের আলােয় কয়েকজন যুবক'-এ জীবন ও চারপাশকে দেখার ভিন্ন দৃষ্টিকোণ মূর্ত হয়ে উঠেছে ‘বাদশা নামদার’ ও ‘মাতাল হাওয়ায় । অতীত ও নিকট-অতীতের রাজরাজড়া ও সাধারণ মানুষের গল্প ইতিহাস থেকে উঠে এসেছে। গল্পকার হিসেবেও হুমায়ূন আহমেদ ভিন্ন দ্যুতিতে উদ্ভাসিত। ভ্রমণকাহিনি, রূপকথা, শিশুতােষ, কল্পবিজ্ঞান, আত্মজৈবনিক, কলামসহ সাহিত্যের বহু শাখায় তাঁর বিচরণ ও সিদ্ধি।
হুমায়ুন আহমেদের জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ এবং মৃত্যু ১৯ জুলাই ২০১২।