দুটি কথা কাজী সাগর নিয়মিত ফেসবুকে লেখেন। ভীষণ জনপ্রিয়। তার স্ট্যাটাসে লাইক অার কমেন্ট ভরে যায়। অামিও তার লেখার একজন নিয়মিত পাঠক। সবক্ষেত্রে একমত না হলেও তার লেখার ধারা পছন্দ করি।
কাজী সাগরকে 'হিমাদ্রী' লিখতে তিরিশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। দীর্ঘ এই সময়ে তিনি যা যা দেখেছেন, যে সকল বিষয় তাকে ভাবিয়েছে, যে সকল প্রশ্নরাজি তার জিজ্ঞাসার খাতায় স্থান পেয়েছে, সে-সব বিষয়ই বোহেমিয়ান 'হিমাদ্রী' চরিত্রের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করার প্রয়াস পেয়েছেন। 'হিমাদ্রী' লেখকের প্রথম উপন্যাস, তাই তার দীর্ঘ সময়ের অবলোকনের ছাপ এতে থাকা স্বাভাবিক। তাতে বিষয়বস্তু যেমন ঋদ্ধ হয়, তেমনি যুক্তির জাল বিস্তারের বিবেচনাবোধ সমৃদ্ধ করে। হিমাদ্রীর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
নির্মোহ হিমাদ্রী যেনো বয়ে চলা স্রোতধারা। তার গতিপথ অবারিত, বাঁধা-বন্ধনহীন। উপন্যাসের পার্শচরিত্রগুলো হিমাদ্রীর প্রবাহিত স্রোতধারায় নিজ-নিজ প্রতিবিম্ব দেখে নিজেদরকে অাবিষ্কার করে। অথচ নির্বিকার হিমাদ্রী জাগতিক মোহ কিম্বা ঠুনকো প্রাত্যহিকতায় বাঁধা পড়েনা। এই অবিচল বয়ে চলা নিরেট মনোভাবাপন্ন চরিত্র যেনো যুগ অতিক্রান্ত কোনো দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিচ্ছবি। যে দৃষ্টভঙ্গি নির্মাণের সার্থকতা লেখক তার 'হিমাদ্রী' উপন্যাসে দেখিয়েছেন।
কুণ্ঠা, লজ্জা-ভয়, বিনয়, সংকোচের চাপে যে সকল সত্য প্রকাশ করতে অনেকেই স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না, সেই কঠিন বাস্তবতা- কাজী সাগরের লেখায় অবলীলায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। অনাবিল অানন্দে এবং শিহরণে ভরে ওঠে পাঠকের মন। এটা ঘটে যেমন তার লেখা পড়ার প্রারম্ভে, তেমনি এ-ধারা অনড় থাকে শেষাবধিও।
কাজী সাগরের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি অামার অান্তরিক কামনা, সে অামাদেরই উত্তরসুরি। তার বাবা-মা, মামা-মামী অামার অগ্রজতুল্য এবং বন্ধু। 'হিমাদ্রী' সৃষ্টির জন্য তাকে অভিনন্দন।
সত্যজিৎ রায়
চিত্রশিল্পী সংগীতগুণী প্রচারবি বাগ্মী এবং বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায়ই সমান দক্ষ লেখক সত্যজিৎ রায়ের প্রধান পরিচয়, ভারতীয় চলচ্চিত্রের মুক্তিদাতা তিনি। আর তাঁর চিত্রের মুক্তি ভারতীয় সংস্কৃতি-সরণীর এক-একটি মাইলস্টোন, বিশ্বের মানচিত্রেও সগর্ব অধ্যায়। সাধনা তাঁর নিষ্ঠাবান, যাত্রা তাঁর নিঃসঙ্গ, শিল্পরুচি সৃষ্টিতে যিনি নিজেকেই অতিক্রম করেছেন। সেই চলচ্চিত্রনির্মাণে চিত্রনাট্য-সংলাপ-রূপসজ্জা থেকে শুরু করে। সম্পাদনা-বিজ্ঞাপন-প্রচারে সত্যজিৎ রায় স্বয়ং সম্পূর্ণ। তাঁর সেই দৃষ্টি এবং অভিজ্ঞতার সমাহার ঘটেছে এই গ্রন্থের রচনাবলীতে : চলচ্চিত্রের সমালােচনা রয়েছে, রয়েছে সংগীতের ব্যবহার বা সম্পাদনার পদ্ধতি এমনকি চিত্রকেন্দ্রিক বিষগ্ন মধুর স্মৃতিচর্যা। স্বচ্ছ ভাবনার দীপ্তিমান প্রকাশে এই গ্রন্থ চলচ্চিত্র-জিজ্ঞাসু তথা যে-কোনাে শিল্পপ্রেমী বাংলাভাষীর অবশ্যপাঠ্য হয়ে উঠেছে।