ফ্ল্যাপের কিছু কথাঃ ছড়া কেবল শিশু-কিশোরদের মনোরঞ্জনের জন্য এ-কথার যেমন ভিত্তি নেই, তেমনি এটিও সত্য যে, গত কয়েক দশকে এ-দেশে বয়স্কপাঠ্য ছড়া রচনার বাড়াবাড়িতে ছোটরা বঞ্চিত হচ্ছে। গত শতকের তিরিশের দশকেই এই প্রবণতা লক্ষ করে বুদ্ধদেব বসু একে আমাদের শিশু-সাহিত্য ‘গণস্ফীতির কৃষ্ণপক্ষ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এই বইয়ে সংকলিত অধিকাংশ ছড়াতেই শিশু-কিশোরদের উপযোগী বিষয় ও ভাষাভঙ্গি ব্যবৃত হয়েছে। বয়স্কপাঠ্য ছড়াগুলোও এমনসব উপদানে সমৃদ্ধ, যা শিশু-কিশোর পাঠকদেরও সমানভাবে আকৃষ্ট করবে। মূলত কবিতা, প্রবন্ধ ও গান রচনায় খ্যাতি অর্জন করলেও আবিদ আনোয়ার ছড়া সাহিত্যেও সমান উজ্জ্বল, এটি পাঠক ও সংশ্লিষ্টজনদের নজর এড়ায়নি। ছড়া সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০০৬ সালে তিনি সুকুমার রায় সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। সত্তরের দশক থেকে ছড়ায় বহুমাত্রিক মিল প্রয়োগের যে প্রয়াস শুরু হয়, তাতেও আবিদ আনোয়ার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এই বইয়ের বিভিন্ন ছড়ায় ব্যবহৃত ‘ওস্তাদ/রোজ তা দে’, ‘কাসন খান/জরাগ্রস্ত’, ‘তিতুমীর/ভীতু বীর, ‘পুত্রবর/সূত্র পড়’, ‘ভূত তো নয়/ খোদ তনয়’, ‘গরীয়ান/দড়ি আন’, ‘হাত-সাফাই/বাদশা ভাই’, ‘পত্রিকাংয়/কত্র্রী খায়’, জোরগলায়/ তোর ছলায়’, ‘উচ্চতর/ পুচ্ছ ধর’, ‘উড্ডনীন/ ভোট দিন’, ‘ফর্মুলা/ ধর মুলা’, ইত্যাদি মিলগুলোতে এর প্রমাণ মিলেবে। কোনো কোনো ছড়ায় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিসঙ্গতির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু এতেও ছোটদের রসাস্বাদনের বিষয়টি বিসর্জন দেওয়া হয়নি।